ফেইসবুক কেন হেইট-স্পিচের কারখানা?

Share

ভিডিও জার্নালিস্ট Johnny Harris গতকালকে একটা ভিডিও-স্টোরি রিলিজ দিছেন, বার্মায়/মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জেনোসাইড এবং এতে ফেইসবুকের কন্ট্রিবিউশনের ব্যাপারে। উনি এর নাম দিছেন – সোশাল জেনোসাইড। এবং দেখাইছেন যে মিয়ানমারে ফেইসবুকের মাধ্যমেই মুসলিমদের ব্যাপারে হেইট-স্পিচ বেশি ছড়াইছে; এমনকি মিলিটারি-রেজিম বিশাল বেইজের গ্রুপ/পেইজ বানায়া এন্টি-মুসলিম হেইট-স্পিচগুলারে প্রমোট করছে। এটলিস্ট দুইজন জার্নালিস্ট ২-৩ বছর আগে ফেইসবুকরে এই নিয়া ওয়ার্নিং দিছিল, কিন্তু বিজনেস কমাইতে চায় নাই বইলা ফেইসবুক এই নিয়া কোন একশন নেয় নাই।

জনি হ্যারিস জাস্ট ফ্যাক্ট’টারে রিভিল করছেন যে, ফেইসবুক জানে এইসব, বা জানতো; কিন্তু কোন একশন নেয় নাই। তো, এই দাবি করাটা মিথ্যা না, কিন্তু কমপ্লিট জিনিস বইলা মনেহয় নাই আমার কাছে। আমার পয়েন্ট এইখানে ৩টা।

এক, ফেইসবুকের মাধ্যমে হেইট-স্পিচ কেন সবচে বেশি ছড়ায়? এই প্রশ্নটারে জনি হ্যারিস খুব একটা এনকাউন্টার করেন নাই। এইখানে নিশ্চয় এলগারিদমের-ই না, বরং ইন্টারনাল ফিলসফি’র একটা কন্ট্রিবিউশন আছে। যে, ফেসবুক তো আসলে এক ধরণের এনগেইজমেন্টরেই প্রায়োরিটি দেয়; এইটাই তাদের বিজনেস যে, দেখো কতো মানুশ আছে এইখানে, কত সময় থাকতেছে; আর থাকতে থাকতে এই অ্যাডগুলা দেখতেছে। কিন্তু অ্যাডগুলা তো কনটেন্ট না, এমন কনটেন্ট দরকার যেইগুলা এনগেইজমেন্ট ক্রিয়েট করবে।

এখন (এলান বাদিউ বলতেছিলেন এইটা যে) আদালতে যদি একটা ন্যায়বিচার হয় তাইলে কিন্তু কেউ ঢাক-ঢোল পিটায়া, মাইক বাজায়া সেলিব্রেট করবে না যে, ন্যায়বিচার হইছে; কারণ আদালতে তো ন্যায়বিচারই হওয়ার কথা। কিন্তু যদি কোন অন্যায় হয়, তাইলে তো সবারই চেঁচায়া উইঠা বলা লাগবে সেইটা। একইভাবে, যেইটা নরমাল ঘটনা, সেইখানে তো কথা-বলার কিছু নাই, কিন্তু যখনই সেইটা একসাইটিং বা তর্কমূলক কোন ঘটনা সেইখানে আপনারে কথা বলা লাগবে, বা এনগেইজড হওয়ার আর্জটা তৈরি হবে। এইখানে, একসাইটমেন্টের জায়গাটাতে টিকটক ফেইসবুকরে টেক্কা মারতেছে। পলিমিকস বা বেহুদা-তর্ক হইতেছে এখনো ফেসবুকের জায়গা। আর এইটা এফেক্টিভ থাকে এক রকমের হেইট-স্পিচের ভিতর দিয়া। একটা কথা যত বেশি ভুয়া না, বরং যত বেশি ইমোশনাল, তত বেশি এনগেইজমেন্টের সম্ভাবনা।

একটা সেমি-ডেটিং সোশাল-প্লাটফর্মের বাইরে ফেইসবুকের পাবলিক-পোস্টের একটা বাই-ডিফল্ট সেটিংস হইতেছে যে কোন জিনিস নিয়া ইমোশনাল অত্যাচার তৈরি করা, যেইটা আল্টিমেটলি হেইট-স্পিচের জায়গাটারে ইন-এভিডেটবল কইরা তোলে।

এইটা হইতেছে আমার পয়লা পয়েন্ট। সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে – ফেইসবুকরে আমরা নিউজ-সোর্স হিসাবে কেন নিতেছি? বা নেয়াটা তো ঠিক না – এইরকমের একটা পজিশন অলমোস্ট সব জায়গাতেই আছে। জনি হ্যারিসও মোটামুটি এইটারই একটা একো করছেন। কিন্তু এই জায়গাটা কেমনে তৈরি হইলো – সেইটা নিয়া বাত-চিত কমই আছে কিছুটা।

মায়ানমারের ব্যাপারে যেইরকম, অই দেশে খবর জানার তেমন কোন সোর্সই তো নাই, মিলিটারি শাসনের কারণে। বাংলাদেশেও ফেইসবুকরে নিউজ সোর্স হিসাবে নেয়ার একটা বড় কারণ হইতেছে ট্রাডিশনাল নিউজ-মিডিয়া খালি বাজে রকম ভাবে পলিটিকালি পোলারাইজড-ই না, পত্র-পত্রিকায়, টিভি-চ্যানেলগুলাতে তো কোন খবর বা নিউজই পাইবেন না!

কিন্তু এই ভ্যাকুয়ামটা বা নিড’টা তো আছে সমাজে। যার ফলে, আশে-পাশের লোকজনের কথা-বার্তারে কিছুটা ডিসকাউন্ট করে, ইমোশনালি-এনগেইজড হয়া সেইগুলারে এক ধরণের নিউজ (সোশাল মিডিয়া নিউজ) হিসাবে নিতে থাকি; যেইটা আমরা জানি যে, পুরাপুরি অথেনটিক নিউজ না হইলেও স্পেশাল ধরণের নিউজ তো অবশ্যই।

এইখানে আমরা কোনদিনই পুরান-দিনের নিউজ পাবো না আমরা, তাই বইলা ট্যাবলয়েড মার্কা নিউজই এইখানে পাইতে থাকবো আমরা – তা না, বরং বাছাইয়ের ভিতর দিয়া কিছু সোর্স আমরা অডিয়েন্স হিসাবে আবিষ্কার করতে পারবো যাদের উদ্দেশ্য অথেনটিক নিউজ-মিডিয়া বা আইডিওলজিকাল পাপেট হয়া উঠা না, বরং এক ধরণের রিলিভেন্ট কনটেন্ট তৈরি করা, যেইটা আমি জনি হ্যারিসের ইনিশিয়েটিভটাতে দেখতে পাই।

মানে, ফেইসবুক বা ইউটিউবরে যে আমরা নিউজ-সোর্স হিসাবে নিতেছি – এইটা কোন ভুল না, ট্রাডিশনাল-মিডিয়ার ফেইলওর; এবং এইটা এতোটা অথেনটিসি-ডিপেন্ডেড ঘটনা না, বরং রিলিভেন্সের ইস্যু। এইটা হইতেছে আমার সেকেন্ড পয়েন্টটা।

থার্ড এবং এর আউটকাম হিসাবে যেই সোশাল জেনেসাইডের জায়গাগুলা তৈরি হইতেছে সেইটা খালি ফেইসবুকের এলগারিদমের দোষ না, একটা পুঁজিবাদী গ্রিডিনেসই না, বরং এর ইনহেরিয়েট ফিলসফির লগে এসোসিয়েটেট একটা ঘটনা। মানে, এইটারে ফাইন টিউন কইরা, সোশাল-নর্মস তৈরি কইরা, আপডেট কইরা সেইটারে ওভারকাম করাটা কোন সলিউশন হইতে পারে বইলা আমি মনে করি না।

জনি হারিসও যেইটা ইন্ডিকেট করতে চাইছেন যে, ফেইসবুক জানতো কিন্তু তারপরও কোন একশন নেয় নাই – এর সাথে আমার কোন দ্বিমত নাই, কিন্তু আমি এইটাও মনে করি যে, এইটা ফেইসবুকের ইন-এবিলিটি না আসলে এতোটা, বরং এর ইন-বিল্ড একটা ফিচার। আর দেশে দেশে অবৈধ-শাসনগুলা এর বেনিফিট নিতে থাকবে। সেইটা ফেইসবুকের ‘ভুল’ এর কারণে হোক, এর ‘অজান্তে’ হোক বা এর কোলাবরেশনের ভিতর দিয়াই হোক।

আর বাংলাদেশে কোলাবরেশনের চান্সটাই বেশি দেখি আমি।

জনি হ্যারিসের ভিডিও’র লিংক:

ইমরুল হাসান

কবি, ক্রিটিক, ফিকশন-রাইটার, ট্রান্সলেটর। জন্ম ১৯৭৫ সালে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

  • October 20, 2023