কিছু ফরহাদ ও কতিপয় মজহারের কাছে বাংলাদেশ কখনোই যথেষ্ট না হওয়ার খেসারত

Share

ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ প্রশ্ন ফরহাদ মজহারেরা কেমনে মোকাবিলা করেন/ করছেন তার একটা নকশা এইখানে(আমার বক্তব্যের শেশে কোটেশন মার্কের ভেতর) দেখতে পাই। বাকশালও এমনেই দেখে; নকশা এক কিন্তু পজিশন উল্টা, ভারতবাদি। এনাদের এই রেডিকেল, বিপ্লবী, ইন্টারন্যাশনাল চাহিদার ফ্যারে পইড়া বাংলাদেশের নিজেদের পলিটিক্স দাড়াইতে তো পারেই নাই, সেইটা যারা কদাচ করতে গেছে তাদের ‘মফস্বলিপনা’ কইয়া ঠেস মারা হইছে।

এগুলার রেশ টানতে হয় বহু বহুদিন। যেমন ধরেন এই বাকশাল অদের ‘উন্নয়ন’ চালিয়াতি জারি রাখতে ইন্ডিয়া, চায়না, রাশিয়া, এমনকি জাপানের থ্রুতে এমেরিকারেও এমনে জড়ায়ে ফেলছে যে চাইলেই এখন এদের আনট্যাঙ্গেল করা যাবে না। বিএনপিরেও এখন ইন্ডিয়ারে ভাও করতে হয়, এমেরিকারে না চেতাইতে ফিলিস্তিন লইয়া চুপ থাকতে হয়। এগুলি করতে গিয়া বাম আর ডানফ্রন্টের আইডিওলগদের কাছ থেকে জাজডও হইতে হয়। অথচ এমেরিকারে তো লাগবে। বিএনপি গত এক যুগে যে পরিমাণ ধরপাকড়ের শিকার এবং বাকশাল এখনো মিছিলে গুলিচালনার ব্যাপারে যেমন বেপরোয়া তাতে মোটামুটি একটা মুভমেন্ট চালাইতে বাকশালের প্রশাসনেরে যে ডরটা দেখাইতে হইবে, তা এমেরিকাই পারবে। কারণ অদের চুরির পয়সা সব তো এমেরিকাতেই। ওইখানেই অরা আটকা। যদি বাংলাদেশের, যেইটারে উনারা কন ফেসিজম, সেই ফেসিজমরে ধরাশায়ী করা লেফট/রাইট আইডিওলগদের মিনিমাম প্রায়োরিটির জায়গাতেও থাকত, ফিলিস্তিনরে সিম্পেথাইজ করতে বিএনপিরে জাজ করা লাগে না অদের। কিন্তু ওই যে, বাংলাদেশ তো সেন্টারে নাই অদের। বরং কতক হীনমন্যতাতেই ভোগে যে একটা ইসলামিক খেলাফত/ কমিউনিস্ট অর্ডার কায়েম করা যাইতেছে না! এবং এইসবে বোঝা যায়, এদের ‘এন্টিফেসিস্ট’ অবস্থানও মূলত গ্লোবাল পলিটিকাল টার্মিনলজিতে বিলং করার খায়েশ হইতে আসে; কোন বাংলাদেশবেজড ডেমোক্রেটিক ভ্যালু সিস্টেম হইতে না।

আপনি মতাদর্শিকদের পাল্লায় একবার পড়লে, শেশ! এরা এমেরিকারে গাইলাইতে চীনেরে ভালো বানাইবে, কানাডা ইউক্রেনেরে গাইলাইতে রাশিয়ারে প্রফেটিক মর্যাদা দিয়া বসবে। কিন্তু এমনকি যদি এরা একটু গ্লোবালও হইতে পারত, বুঝতো, ফিলিস্তিন প্রশ্নে রাশিয়া বা চীনের যে পজিশন তা কোন রেডিকেল কমপ্যাশনেট বিবেচনাপ্রসূত পজিশন না, বরং ডিপলি পলিটিকাল এবং সেলফিশ মোটিভেশানের জায়গা হইতে নির্ধারিত(এবং তাতে কোন সমস্যাও নাই যদি তা ফিলিস্তিনেরে কোনভাবে বেনিফিটেড করে; যেমন এখন বিএনপির চুপ থাকাও আলাদা কইরা কোন সমস্যা না, কারণ এতে ফিলিস্তিন সমস্যায় বাড়তি কিছু অ্যাড হয়না। অ্যাড হইতে পারে বরং বাংলাদেশ এজ এ রাষ্ট্র,অফিসিয়ালি, চুপ থাকায়)। যেই পলিটিক্স অরা নির্ধারণ করে অদের নিজেদের কোর প্রিন্সিপালের উপর বেইজ কইরা। এবং ফ ম রা যদি আরেকটু বাংলাদেশসেন্ট্রিক হইতেন, দেশের এই ক্রিটিকাল মোমেন্টে প্রধান কর্তব্য নির্ণয়ে ডান/বাম উভয় বলয়ে উচিত দিশা দিতে পারতেন।

কিন্তু খেয়াল করেন, যখন একটা চাপ অবশেশে বাকশালের উপরে দেয়া গেল, তখন সেইটারে ইউটাইলাইজ করার বদলে মিনিমাইজ করা শুরু করলো। হঠাৎ উনাদের বয়ান হইলো, গণতন্ত্র দিয়া কী হবে, যদি মানুশ খেতেই না পায়। মানে এত ভোট ভোট যে করতেছ, মানুশ তো খাইতেই পায় না। মানুশের ভোটাধিকার আর খাওয়ার অধিকার হঠাৎই একটা সাংঘর্ষিক প্রত্যয় হিসাবে আবির্ভাব হইলো। এই যে নতুন নতুন দ্বন্দ্বের অবতারণা কইরা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান দ্বন্দ্বরে ভুলায়ে দেয়ার পলিটিক্স, এইটাই উনাদের ‘গ্লোবাল’ হওয়ার পলিটিক্স, ‘বিশাল ব্যাপার’ হওয়ার পলিটিক্স। স্যাডলি।

“শেখ মুজিব ছিল আমেরিকানদের বন্ধু, তিনি সিয়াটো সেন্টো সমর্থন করেছেন এবং সমর্থন করতেন। তাতে মুজিবের কোন দোষ হয়ে যায় নাই, কারন তিনি তো হো চি মিন না। আমেরিকানরা চেয়েছে চীন এবং ভারতের বিপরীতে একটা শক্তি তারা এখানে তৈরি করবে এবং সেটা তারা তৈরি করবে শেখ মুজিবকে দিয়ে। ভারত তখন কিন্তু নন অ্যালাইনমেন্টের শিবিরে। শেখ মুজিবুর রহমান তখন এল এফ ও এর অধীনে ইয়াহিয়া খানের নির্বাচন করলেন। তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক কেউ না। তাদেরই লোক। গোলটেবিল বৈঠকে তাদের কথাবার্তা হয়েছে। হওয়ার পরে ইলেকশনটা হলো। স্বভাবতই বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছে, মওলানা ভাসানীও চেয়েছিলেন, কারণ জনগণ চায়। আমেরিকানরাও চেয়েছে, অনেকে চেয়েছে।

চাইলে কী সুবিধা হতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, একটা বড় দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিব কুড বিকাম অ্যা গ্লোবাল লিডার। একটা আন্তর্জাতিক নেতা হতো। স্বায়ত্ব শাসিত পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের দিল্লীর দালালরা কী করলো? তারা শেখ মুজিবরকে আন্তর্জাতিক নেতা হতে দিলো না। কারন তাদের ইন্দিরা গান্ধী আছে। শেখ মুজিবর তো পাকিস্তান ভাঙতে চাননি। তাহলে পাকিস্তান ভাঙলোটা কে? বা কারা? কী জন্য? এদেরকে চিহ্নিত করা ছিল তখনকার কাজ। আমাদের লড়াই তো ছিল বড় ভূ-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে এদেরই বিরুদ্ধে। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত। আমরা, র্যাডিকাল বাম ধারা বা তথাকথিত নকশালরা, স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান চাইনি। ভারতের উপনিবেশ হতে চাইনি। বরং ভারতীয় উপনিবেশ কাশ্মির ও উত্তর পূর্ব ভারতের জনগণের মুক্তি এবং উপমহাদেশব্যাপী গণতান্ত্রিক বিপ্লব চেয়েছিলাম, ঔপনিবেশিক আমলে গড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক হিন্দু ও মুসলমানের রূপান্তর চেয়েছিলাম। শেষ মেষ ‘পূর্ব পাকিস্তান’ বাংলাদেশ হয়ে ভারতীয় উপনিবেশ হয়েছে। কিছুই তো বদলায়নি।

তো কী করলেন আপনি শেখ মুজিবুর রহমানকে? আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বানানো হলো একটা মাইনর মফস্বলের লিডার। আন্তর্জাতিক রাজনীতির তাৎপর্যের দিক থেকে হু ইজ হি? হি ইজ নোবডি। আপনি তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ পর্যন্ত করলেন। কিন্তু আমরা তো ‘বঙ্গ’ না। আমরা তো খণ্ডিত বাংলা। টুকরা বাংলা। মুসলমানদের বাংলা। বঙ্গ তো বিশাল ব্যাপার। সেটা সৈয়দ সুলতানের বাংলা। কিংবা আলাউদ্দিন হোসেন শাহের স্বাধীন বঙ্গ। বঙ্গ এই প্রথমবার একাত্তরে নতুন স্বাধীন হয় নাই। সে স্বাধীন ছিল, কিন্তু সে স্বাধীনতা হারিয়েছে ইংরেজ আমলে। ইট’স অ্যান এ্যামপায়ার। সে এ্যামপায়ার হওয়ার যোগ্যতা তো আমাদের ছিল। যারা ভাঙলো, তাদের তো ইতিহাস দিয়ে আপনাকে চিনে নিতে হবে এবং চিনিয়ে দিতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এটা তো আমাদের বুঝতে হবে, কেন এটা ভাঙলো…”
ইব্রাকর ঝিল্লী

কবি, ক্রিটিক।

  • October 18, 2023