আমরা কোথায় আছি?

Share

গতবার ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার বিষয়ে সারমর্ম ছিল যে,ইউনিভার্স লোকালি রিয়েল না।

শুরুতেই আপনার কমনসেন্স ও ডেইলি লাইফের অভিজ্ঞতা ফালায়া দেন। এগুলা পার্টিকেল ফিজিক্স খুব একটা মানে না।

লোকালি রিয়েল কি?

আমাদের জানা ফিজিক্সের নিয়মের মধ্যে দুইটা বিষয় আছে। একটা হইতেছে,লোকালিটি। অর্থাৎ কোন চেঞ্জ আসতে হলে বা কজ-ইফেক্ট হইতে হলে,যেমন চুলায় রান্না হতে হলে-চুলার হিট গিয়ে পাতিলে পৌঁছাতে হবে। তাহলে রান্না হবে। অর্থাৎ তাপ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছাতে হবে। কাওকে থাপ্পর মারতে চাইলে,হাতকে তার গালে নিতে হবে। রেডিও শুনতে হলে স্টেশন থেকে রেডিও ওয়েভ রিসিভার পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। এবং এই ‘পৌঁছানো’,তা হাত/ওয়েভ যাই হোক,তা আলোর গতির চাইতে বেশি দ্রুত যাইতে পারে না৷ ফলে কজ এবং ইফেক্টের মধ্যে একটা সময় লাগবে,চুলার হিট পাতিলের তলা পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগবে। কজ এবং ইফেক্ট ইনস্ট্যান্ট ঘটবে না। একটা সময়ের পার্থক্যে ঘটবে। হিট দেয়ার সাথেই পানি ফুটবে না।

এইটা লোকালিটি।

আর রিয়েলিটি বলতে আমরা বুঝি,আমরা কোন কিছু দেখি আর না দেখি বা মাপি আর না মাপি-বস্তুজগত বা একটা চাঁদ তার জায়গাতেই থাকবে। আমি না দেখলেও বা না শুনলেও কোন গাছ পড়ে গেলে,তার শব্দ হবে। কিন্তু কোয়ান্টাম ফিজিক্স বেশ আগেই আবিষ্কার করছে যে,এইটা পার্টিকেল লেভেলে কাজ করে না।

পার্টিকেল একটা অনির্দিষ্ট অবস্থায় থাকে। একটা কয়েন ছুঁড়ে মারলে যেমন হয়, ঘুরতে থাকে। হেড বা টেল-ফিক্সড না। তবে যদি মাপা হয়/বা কেউ দেখে তাহলে যে কোন একটা ফলাফল আসবে।

কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট থিওরি অনুযায়ী,মনে করেন, দুইটা পার্টিকেল কো-রিলেটেড। একটা যদি ডান দিকে ঘোরে,আরেকটা ঘুরবে বাম দিকে। একটা ওপরের দিকে ঘুরলে,আরেকটা নিচের দিক। একটা কয়েন ছুঁড়ে মারার পর যদি হেড ওঠে,তাহলে আরেকটা কয়েনে উঠবে টেল। সব সময়। এক্সপেরিমেন্টে দেখা গেছে,এই অদ্ভুত ঘটনাটা পার্টিকেলের ক্ষেত্রে ঘটে।

এখন এই বছর যেইটা আবিষ্কার করা গেল যে, এই রকম দুইটা কয়েন যদি ইউনিভার্সের দুই প্রান্তেও থাকে,তাহলেও একই ঘটনা ঘটবে। এবং সেইটা ইনস্ট্যান্ট।

আপনার ঘরে একটা কয়েন ছুঁড়ে মারলেন। টেল উঠলো। আর অপর কয়েন যদি অন্য গ্যালাক্সিতেও থাকে,তাতে ইনস্ট্যান্টলি হেড উঠবে।
একই সাথে ঘটবে। তাহলে দুইটা পার্টিকেল একে অপরের সাথে ইনস্ট্যান্টলি কমিউনিকেট করে কিভাবে? কারণ, দুইটা কয়েনের যে দুরত্ব তা অতিক্রম করতে আলোর গতিতেও কয়েক বছর লাগবে। ফলে লোকালিটি কাজ করতেছে না।

আপনি মাপলে একটা পার্টিকেল একরকম পজিশন বা অবস্থানে থাকবে। না নিলে আরেক পজিশনে থাকবে। এইটাকে সুপারপজিশন বলে।

ফলে সুপারপজিশনের কারণে ‘রিয়েলিজম’ কাজ করে না। অর্থাৎ অবজার্ভ করলে এক রকম,আর না করলে আরেক রকম। আর নতুন আবিষ্কারের যেইটা, লোকালিটি বা দুইটা বস্তুর মধ্যে যোগাযোগের কোন টাইম বা স্পর্শ লাগতেছে না। ইনস্ট্যান্ট হইতেছে।

তাহলে ব্যাখ্যা কি হতে পারে?

একটা পার্টিকেলের পজিশনের সাথে সাথে অপর পার্টিকেল ইনস্ট্যান্টলি পজিশন কেমনে ঠিক করতে পারে? পার্টিকেল দুইটা কি একই জিনিস যা দুই জায়গায় আছে? কিন্তু একই পার্টিকেল হলে একইসাথে দুই জায়গায় থাকে কিভাবে?নাকি এই পার্টিকেলগুলা অন্য কোন ডাইমেনশনের পার্টিকেলগুলার ছায়ার মত বা সিনেমার পর্দায় ফেলা প্রজেক্টরের মোশন পিকচারের মত? যেমন আমাদের ছায়া আমাদের সাথেই আকার পরিবর্তন করে কিন্তু ছায়াটা ‘আসল’ না? নাকি এই এইসব আচরণ একটা ফিক্সড গেমের মত, সব আগে থেকেই ঠিক করা?

হয়তো সুপারপজিশনের কারণে মাপলেই এক একটা প্যারালাল ইউনিভার্স (মেনি ওয়ার্ল্ড থিওরি) তৈরি হয়। অর্থাৎ এক একটা পজিশন,এক একটা ইউনিভার্সের সম্ভাবনা। অথবা পুরা জগতই বিগ ব্যাঙের সময় থেকে ঠিক করা। সুপারডিটারমিনিস্টিক। আপনি কোন সময় পার্টিকেল মাপবেন,সেইটাও ঠিক করা। অর্থাৎ আপনার ফ্রি উইল নাই। অথবা জগত একটা হলোগ্রাফিক মডেল (ব্যোম/প্রিব্রাম) বা সিমুলেশন। কিংবা জগত একটা একক সত্তার মত। তার অন্তর্গত পরিবর্তন তার সামগ্রিক কোন পরিবর্তন ঘটায় না।

আমরা এই মুহূর্তে জানি না। কিন্তু এই রকম কিছু পসিবলিটি আমাদের সামনে দাঁড়ায়া আছে।

কবির আহমেদ

জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি।

  • September 13, 2023