
একজন মানুষের কম বেশি প্রিন্সিপালস থাকে। মূল্যবোধ থাকে। নৈতিকতা থাকে। ক্ষমতার প্রতি আসক্তি থাকে। মর্যাদাবোধ থাকে। পক্ষপাত থাকে।
পলিটিক্যাল মোটিভ থাকে।
ইন্টারেস্টিংলি, এইসব বৈশিষ্ট্য একটা প্রতিষ্ঠানেরও থাকে। আপনি যেকোন প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে এটা বুঝতে পারবেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফ-তার যেমন নিজস্ব এইসব বৈশিষ্ট্য আছে, তেমনি অস্কার কিংবা নোবেল কমিটিরও আছে, বাংলা একাডেমির আছে,এনজিওর আছে। আপনার এলাকার মসজিদ মন্দিরেরও আছে। অর্থাৎ এই সকল প্রতিষ্ঠান আপনার মতই অর্গানিক আচরণ করবে। নিজের অবস্থান শক্ত করবে। নির্দিষ্ট পক্ষপাত করবে। ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে।
কিন্তু, সেই সকল বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি প্রভাবশালী ও শক্তিশালী হবে একজন ব্যক্তির তুলনায়। একজন ব্যক্তি যত ক্ষমতাধর, তারচেয়ে বহুগুণে বেশি। এমনকি রাষ্ট্রও তাই। একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যত মানবিক মানুষই হোক, ইন্টারন্যাশনাল পলিসির যে ভিত্তি বহু বছরে তৈরি হয়েছে, তার সব ভাঙা তার পক্ষে ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব না। এটাই প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার বিপদ।
তো এই সকল প্রতিষ্ঠান কি উপায়ে নিজের ক্ষমতা জারি রাখে?
বহু উপায়ে, মোস্টলি ফিনান্সিয়াল এন্ড কালচারাল উপায়ে। তার মধ্যে একটা উপায় হচ্ছে পুরষ্কার প্রদান।
প্রতিষ্ঠানের এই সকল মানবিক বৈশিষ্ট্য থাকলেও, তার নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি নাই। ফলে তাকে হিউম্যান ক্রিয়েটিভিটিকে ইউজ করতে হয়। ক্ষমতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ক্রিয়েটিভিটি।
যেহেতু তার নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি নাই, সেহেতু এই জায়গায় প্রভাব বিস্তারের জন্য তাকে ক্রিয়েটিভিটির সমঝদার হিসেবে আবির্ভূত হতে হয়। কখনো সেটা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও হতে পারে। পলিটিক্যাল সুবিধার জন্য।
যেমন, মনে করেন, জাঁ পল সাত্র নোবেল নিলেন না। রিজেক্ট করলেন। নোবেল কমিটি আসলে কিসের প্রোডাক্ট? লিবারেল মার্কেট এবং প্রগ্রেসিভ ভেলুর প্রোডাক্ট। এই প্রোপাগান্ডা স্প্রেড করা তার কাজের ইনহেরেন্ট মোটিভ। সাত্র হচ্ছেন, মার্ক্সিস্ট এবং সোসালিস্ট। তার কথায়, মানুষের লাইফের অর্থ ডেভেলপ করতে হয়। কনজিউমারিজিমের বিপক্ষে। ফলে দুইটা দুই মেরুর জিনিস। তারপরও সাত্রের বারবার না করা সত্ত্ব্বেও নোবেল কমিটির আগ্রহের কারণ এই যে, ‘আমরা এত বেশি লিবারেল যে ভিন্নমতের লোক এবং ক্রিয়েটিভিটিরও স্পেস দেই’। এই আইডিয়াটা নোবেল কমিটিরই কাজে আসে। বিনিময়ে সাত্রে হজম হয়ে যায়। এস্টাবলিশমেন্টের পকেটে ঢুকে যান।
সাত্রের কি নোবেলের দরকার ছিল? না। কিন্তু নোবেল কমিটিরই সাত্রের রিপ্রেজেন্টেশনের দরকার ছিল।
আবার, মালালা ইউসুফজাই। নারী শিক্ষা নিয়ে কাজ তো ভাল কাজ। কিন্তু তিনি পুরষ্কার গ্রহণের মধ্যে দিয়ে এনজিওর কোন প্রোপাগান্ডা রিপ্রেজেন্ট করলেন কি, যা পোস্ট-কলোনিয়াল কাজকর্মে সহায়তা করবে?
মার্লন ব্র্যান্ডো অস্কার রিজেক্ট করলেন এই কারণে যে, আমেরিকানরা নেটিভ ইন্ডিয়ানদের মর্যাদার সাথে ট্রিট করছে না। অস্কার না পাওয়ায় ব্রান্ডোর কিছু যায় আসে নাই। ক্ষতি কিছু হয়ে থাকলে,একাডেমি এওয়ার্ডসের হতে পারে। হলিউডের ওই সময়কার অবস্থা বা জন ওয়েইনদের অবস্থা দেখতে ‘ট্রুম্বো’ কিংবা ‘ম্যাঙ্ক’ দেখতে পারেন। মজার বিষয় এই যে, ওইসব নিয়ে সেল্ফ-রেক্টিফিকেশন জাতীয় কাজও হলিউডই করে। এইটাও ক্ষমতার রাজনীতিরই অংশ। সমালোচনার দরকার থাকলে নিজের ঘর থেকেই তো ভাল,তাই না?
পুরষ্কার দেওয়া প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পলিটিক্স থাকে। ফলে পুরষ্কার পাওয়ার জন্য যেই সকল আর্ট তৈরি হয়ে থাকে, তা দূর্বল আর্টই,পলিটিক্যালি। মানুষের কম কাজে আসার কথা।
কোন আর্ট, বই বা সিনেমা-এগুলোকে পুরষ্কারের বাইরে দেখতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো এমন কোন পার্সপেক্টিভের সন্ধান পাবেন, যা মানুষের দরকার। প্রতিষ্ঠানের না। কারণ, প্রতিষ্ঠান মানুষের মুখোশ পরে থাকলেও নিজের সারভাইভালের জন্য মৌলিক কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট রয়েছে।
ফলে পুরষ্কারকে লাইটলি নেয়াটা জরুরী। বুকার বা নোবেল উইনারদের বাইরেও বই পড়েন। কান কিংবা অস্কার ঠাঁই দেয় নাই, সেসব সিনেমাও দেখেন।
পুরষ্কার এপ্রিশিয়েট করেন ভদ্রতা করে, সিরিয়াসলি নিয়েন না। কাজ ভাল হলে প্রশংসা করেন, পুরষ্কারের জন্য না। মানবিক আর্টের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক পুরষ্কারের সংযোগ সামান্যই।
Leave a Reply