বরং আরেকটু তলাইয়া ভাবি চলেন – রক মনু

Share

আমরা এক মজিদ চিনি, ওয়ালিউল্লার মজিদ। কি করছিলেন উনি? গরিব আছিলেন, পরে বুদ্ধি কইরা একটা মাজার বানাইয়া ফেললেন। ঐখানেই উনি থামলে শেইটা গরিবের ছারভাইভাল ইন্সটিংক্ট হইলো ছেরেফ, ততোটা ভিলেন হইতেছে না। ভিলেন হইতে তার একটা কচি মাইয়া বিয়া করতে হইলো, এইটা তার খাছলতের দোশ, মানুশ হিশাবে বেশ খারাপ দেখানো গেলো; কিন্তু বড়ো ঘটনা হইলো, তার পলিটিকেল জয়, শহরের কলোনিয়াল ইংরাজি ইশকুলে পড়া পোলারে পলিটিকেল চুবানি দিয়া শহরে ফেরত পাঠাইলো মজিদ!

শেই শহুরে পোলা এখনকার বাংলা মিডিয়ামের একজন আইকন, তার হার তাবত বাংলা মিডিয়ামের হার। বিদ্দানন্দ আশলে শেই হারের বদলা নিছে! মানে, খেয়াল করেন ন্যারেটিভটা বা বিদ্দানন্দের বয়ানটা: মজিদকে পরে আমরা হারাইয়া দিছি, তার মাজারটা আর নাই, ফলে এখন শে ছেরেফ গরিব, খারাপ লোক, তবু গরিব তো বটে, তাই আমরা তারে খাওয়াইয়া বাচাইয়া রাখি, আমাদের মনে বেশুমার দরদ! এবং শকল গরিব বুড়া আশলে একেকজন পোটেনশিয়াল মজিদ, ফলে খারাপ, ফলে তার ছারভাইভাল ইন্সটিংক্ট একটু দমাইয়া রাখা দরকার, পেটে দুইটা ভাত দিতে পারলে মজিদ হবার ফুশরত পাবে না ততো, আর খিদা বেশি লাগলে মানুশের হিম্মত বাইড়া জায়, মস্ত ঝাপ দিয়া বশতে পারে তখন! এইভাবেই বিদ্দানন্দের বয়ানে গরিবের জেনেরিক নাম হইয়া ওঠে মজিদ।

এরপর আমাদের ভাবা দরকার খোদ চ্যারিটি লইয়াই! বিদ্দানন্দ বা আছ্ছুন্না বা জাগো, বা মাস্তল ফাইন্ডেশন–এগুলার হিন্দু মোছলমান ততো দেখার কিছু নাই এখন, তারচে বড়ো পয়েন্ট হইলো, এগুলা বাকশালের পেয়ারা চ্যারিটি অর্গানাইজেশন, বাকশাল নামের রশুনের একেকটা কোয়া! বাকশালেন পেয়ারা না হইলে, তার গুডবুকে আপনের নাম না থাকলে আপনে কোন ফাউন্ডেশন বানাইতে পারবেন না, পারমিট বা এজাজত পাইবেন না আপনে! এগুলা আপনাদের খুব দুরের দুরের লাগতে পারে একেকটা, কিন্তু ভাবার শুবিধা পাইতে আরেক কিছিমের দুই তিনটা জিনিশ ভাবতে পারেন; ধরেন, ছায়ানট-উদিচি-ওলামা লীগ-ইনু মেননের বাওয়ামিরা কতটা দুরের দুরের?

আরেকটা দিক থিকা ভাবেন; দেশে শত শত বছরের চ্যারিটি আছে নাকি কোন? ৭ মশজিদ রোডে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন দুই বেলা খিচুড়ি খাওয়ায় খুব শম্ভব, পুরান ঢাকায় কোন একটা পুরানা হিন্দু ফেমিলির একটা পুরানা মাগনা শরাইখানা আছে মনে পড়ে; এনারা হালের জাগো বা বিদ্দানন্দ বা আছছুন্নার মতো এতোটা গাইয়া বেড়ায় না। কিন্তু এইগুলা তো দুয়েকটা, বয়শ অতো বেশি না; বরং শত শত বছরের পুরানা একেকটা চ্যারিটি ফাউন্ডেশন হইলো একেকটা মাজার! মিরপুরের শাহালি মাজারে কত মানুশ থাকে এবং খায়? অমন কতগুলা মাজার আছে শারা দেশে?

খেয়াল করেন, মজিদ নামের মাজারিকে বিদ্দানন্দ জেনেরিক গরিব বানাইয়া আশলে মাজার নামের নেটিভ চ্যারিটিকে উচ্ছেদ করতে চায়! খেয়াল করলে দেখবেন, মাজারের ব্যাপারে আছছুন্নার পজিশনও বিদ্দানন্দের খুব কাছের কিছু হবে!

চাল-ডাল-তেল দেওয়াটারেই মস্ত চ্যারিটি লাগে আমাদের, কিন্তু এইগুলা তো রাইন্ধা খাইতে হয়, শেই কাঠ/জালানির খরচ আছে কিন্তু, হাড়ি পাতিল লাগে, পানি কই পায় তারা! মাজার আপনারে রাইন্ধা দেয়, গরিবের কাম ছেরেফ জাইয়া খাইতে বশা! এবং মাজারে ছেরেফ খায় না মানুশ, থাকেও, জার ঘর নাই থাকার, তার থাকার কশ্টো কতটা বুঝি আমরা!

মাজারের বাইরে আর কোন পুরানা চ্যারিটি? মশজিদ আশলে একটা চ্যারিটি ফাউন্ডেশনই আছিলো, মুছাফিরেরা মশজিদে থাকতো। খেয়াল করলে দেখবেন, শারা দেশের মশজিদে এখন তালা, গরিব মানুশ মশজিদে ঢুকতে পারে না আর! ঢাকার মশজিদগুলায় নামাজের টাইমে গরিবেরা বাইরে বইশা থাকে, খয়রাত পাবার আশায়; তাগো কেউ নামাজে ডাকে? ডাকা তো দুর, তারা জদি মশজিদে ঢুইকা এছির ভিতর নামাজ পড়তে চায়, ঢুকতেই পারবে না খুব শম্ভব!

এই গরমের ভিতর ভাবেন, দেশের শকল মশজিদে ফ্যান-এছির ভিতর ঘুমাইতেছে মুছাফির, গরিব মানুশ, ছেরেফ মোছলমান না, কোন হিন্দু-বৌদ্ধ জদি মশজিদে ঢুইকা ঘুমায়, আপনে কে শেইটা জিগাবার? আপনের তো মালুমই হবার কথা না–শে হিন্দু নাকি বোশ্টম নাকি মোছলমান নাকি খিরিস্টান! মশজিদে তালার মতোই খোলা পার্কগুলা এখন আটকানো, পাকগুলা এখন বড়োলোকের চর্বি কমাবার জিমনেশিয়াম একেকটা! অথচ এগুলা শবই চ্যারিটির একেকটা ফর্ম, শত শত বছর ধইরা চলতেছে! কিন্তু এগুলা বন্ধ কইরা দিছে, দিতেছে দেশের বড়োলোকেরা, বাকশাল শেই পোজেক্ট আগাইয়া নিতেছে, বিদ্দানন্দ বা আছছুন্না হইলো বানানো অল্টারনেটিভ; জেন মাজারে পয়শা কম জায়, জেন একজন খয়রাতির পাশে খাড়াইয়া আমার নামাজ পড়া না লাগে! টোটাল ছিস্টেমের একটা শিফট জে আমরা ঘটাইতেছি, তারই শামনের কাতারের ছিপাই হইলো বিদ্দানন্দ বা আছছুন্না বা জাগো বা মাস্তুল…

//১৮ এপ্রিল ২০২৩
#রকমশাহেরবয়ান

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

  • April 18, 2023