আমরা টিকটক করি, ভ্লগ করি… – মাহীন হক

[বেসিকালি প্রেরণা নামের মেয়েটা এইচএসসির আগে থিকাই ভ্লগ করে। এইচএসসির সময় নজরে আসছে। হাসাহাসি করসে বেশিরভাগ, অনেকে এপ্রিশিয়েট করসে। পরে মেডিকেল এক্সামে ৫ পাইসে পর আবার কথা বলা শুরু করসে মানুষজন। সামিয়াতুল খান সামি নামে একজন তারে নিয়া পোস্ট* দিলে, অই পোস্টের রেসপন্স হিসাবে মাহীন হক এইটা লেখেন।]
আমাদের আগের জেনারেশনের লোকগুলা আমাদের জন্য এত জঘন্য একটা দুনিয়া ফালায়া রাইখা যাওয়ার পরও আমাদেরকে বারবার এত ছবক দেয়ার, আমাদেরই ‘অথর্ব প্রজন্ম’ দাবি করার হিম্মত কই পায়, এইটা আমি বহুবার ভাবসি। পোস্টদাতা সম্ভবত অত আগেরও না, আমাদের জেনারেশনের কাছাকাছিরই লোক। তবু তার টোনও ওইরকমই। উনি খুব চিন্তিত এই অথর্ব জেনারেশন যখন লিডিং রোলে যাবে তখন কী হবে। (আগের জেনারেশনের লিডাররা অনেক থর্ব কিনা!)
যাইহোক। কিছুক্ষণের জন্য ভুইলা যাই আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মদের কীর্তি। ভুইলা যাই যত দাসপ্রথা, বিশ্বযুদ্ধ, ইনকুইজিশন। মাইনা নেই আমরাই মানব-ইতিহাসের জঘন্যতম জেনারেশন, সবচাইতে অধঃপতিত। কারণ আমরা টিকটক করি, ভ্লগ করি। কিন্তু টিকটক কি আমরা বানাইসি, নাকি আমাদের আগের জেনারেশন? যেই সিচুয়েশনে আমরা আছি ওইটা তো আমাদের বানানো না, উই ওয়্যার বর্ন ইনটু ইট। উনি নিজেই বললেন অটোপাশ, ফালতু সিলেবাসের কথা। এই সিলেবাস, কারিকুলামও তো আমরা ঠিক করি না। বা ধরেন আগুন নেভানো, ফার্স্ট এইড দেয়া, এগুলা কি কেউ নিজের থেকে শেখে? এগুলা শেখানোর দায় কার? রাষ্ট্রের না? স্কুলের না? তাও সমূহ দোষ কেমনে জানি আমাদেরই, সব আক্রোশ আমাদের উপর। এই ‘অথর্বতায়’ আমাদের পূর্ববর্তী জেনারেশনের কোনো ভাগ নাই, সিস্টেমের কোনো দোষ নাই, রাষ্ট্রের কোনো দায় নাই। আমরাই পাঠা।
“এই দেশের জেনারেশনগুলা এমনিতেই ডে বাই ডে অথর্ব একটা জেনারেশনে পরিণত হইতেসে। একটা ব্যাচ এমনিতে পাইসে অটোপাশ, আর দুই ব্যাচের সিলেবাসের যেই অবস্থা তাতে করে এই লুপহোল কয়দিন ধরে চলবে তার কোন ঠিক নাই। তার মধ্যে এখন কি হচ্ছে? এখন আমরা এমন একটা মেয়েকে আইডিওলাইজ করতেসি কিংবা আমরা এমন একটা কন্সেপ্টকে প্রেইজওর্থি বানাচ্ছি যেখানে কোনকিছুকে পাত্তা দেওয়া হয়না। যেইখানে পড়াশোনা করাটাকে মনে করা হয় বাতুলতা আর এই ভ্লগ করে প্রচুর ফ্যান ফলোয়ার আর্ন করাটাকে মনে করা হয় জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্য। আর সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার, এই দেশটার লিডিং রোলে কয় বছর পর এই অথর্ব জেনারেশনই থাকবে।” – সামিয়াতুল খান সামি’র ফেসবুক পোস্টের অংশ
বত্ব, আমার কিন্তু আগের জেনারেশন নিয়া তেমন কোনো ক্ষোভ নাই। আমরা ওই জায়গায় থাকলে একই কাজ করতাম, তারা এই জায়গায় থাকলে একই কাজ করতো। আমরা আমাদের কালিক বাস্তবতার বাইরে না। আবার আগের প্রজন্ম হইতে যেমন অসাধারণ বহু মানুষ আসছে, বহু জঘন্য মানুষও আসছে৷ আমাদের প্রজন্ম হইতেও আসবে। কিন্তু মোটাদাগে আমাদের প্রজন্ম সবচাইতে অধঃপতিত, এইসব ফাঁপা হামবড়া কথা আমি শুনতে যাব না।
এমনিতে, প্রেরণা নামের এই মেয়েটার উপর লোকে এত চেতলো কেন? প্রিভিলিজড বইলাই হোক, আমাদের বোর্ড এক্সাম/এডমিশন ফেজের যে স্বাভাবিক বিভীষিকা, ওইটারে সে পাত্তা না দিয়া পারসে বইলা? হাসি-খেলা হিসেবে নিতে পারসে বইলা? প্রায় প্রতি বছর দেখসি, পুরানো ব্যাচের সিনিয়ররা নতুন ব্যাচের পোলাপানরে এইসব বইলা খোচাইতে থাকে যে তাদের বেলায় সব অনেক সহজ ছিল, প্রশ্ন সহজ ছিল, সিলেবাস কম ছিল ইত্যাদি। এগুলা সেডিস্ট আচরণ। আপনারা চান না আপনারা যে ট্রমাটিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেসেন, আপনাদের জুনিয়ররা তার মধ্য দিয়ে না যাক? নাকি আপনারা ওইটারই কন্টিনিউয়েশন চান? বড়দের কথাবার্তাও দেখবেন এই লাইনের, যে তাদের সময় জীবন কঠিন ছিল, এবং সেইজন্য প্যারা দিতে থাকেন ছোটদের। তাদের অনুজদের জন্য জীবন একটু সহজ, সুন্দর হবে, এইটা তারা সহ্যই করতে পারে না কেন জানি।
ফেসবুক ওয়াচ লিংক: https://www.facebook.com/watch/?v=6836020813091290
কার্ট ভনেগাটরে ভালোবাসছিলাম আংশিক এই কারণে। সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কইরা আসা লোক। সে যখন একগাদা কলেজ স্টুডেন্টদের সামনে কথা বলতে আসতো তখন সে আইসা যুদ্ধ কইরা আসা নিয়া কোনো গর্ব করতো না, সামনের নতুন প্রজন্মের মুখগুলারে হেয় করতো না কোনোভাবে। বরং সে ক্ষমা চাইত। “আমাদের মাফ কইরা দিয়ো তোমরা। কী জঘন্য দশা করসি আমরা পৃথিবীটার।”
…
সামিয়াতুল খান সামি’র ফেসবুক পোস্টের লিংক:
Leave a Reply