১৪ ই এপ্রিল, ১৯৮৩ – ইমরুল হাসান

Share

এই জিনিসটা আছে, একটা ডেইটে অনেক ঘটনা তো ঘটে। এইটা খুব ভালোভাবে রিয়ালাইজ করছিলাম ১০ই মহরম নিয়া। তখন একটা মিলাদ পড়ানোর কথা হইতেছিল, তো, আমার মনে তো কারবালার ঘটনা’টা ছিল। আমি কইলাম, এইরকম স্যাক্রিফাইসের দিনে কোন খুশির বা সেলিব্রেশনের মিলাদ পড়ানোটা কি ঠিক হবে? তখন যিনি মিলাদ পড়াইবেন, উনি বললেন যে, ১০ই মহরম তো ভালো দিন! অইদিন মুসা-নবী ফেরাউনের হাত থিকা মুক্তি পাইছিলেন, ইউসুফ নবী মাছ পেট থিকা বাইর হইতে পারছিলেন, (মানে, এইরকমের কিছু) পজিটিভ ঘটনাও আছে এই তারিখে, ইসলামের হিস্ট্রিতে। ইমিডিয়েট পাস্টই একমাত্র পাস্ট না।

তো, ১৪ই ফেব্রুয়ারি খালি ভ্যালেন্টাইন ডে না, পহেলা বসন্ত না, ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিও। যেইদিন ঢাকা ভার্সিটিতে স্টুডেন্টদের খুন করার ভিতর দিয়া এরশাদ তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করছিল। মিলিটারি ছিল এর পিছনে, আমলারাও। মিডিয়ারে শুধু দখলে নিতে পারে নাই (এখনকার নয়া বাকশালের মতো), যার ফলে ঘটনাগুলা নিউজের ভিতর দিয়া জানতে পারি আমরা এখনো। এরশাদের যেই স্বৈরাচারি ক্ষমতা-কাঠামো (মিলিটারি, পুলিশ, আমলা) এর লগে মিডিয়া ও সিভিল-সোসাইটি অ্যাড হইয়া এই ‘নয়া বাকশাল’ তৈরি হইছে এখন। এইটা এক্সটেন্ডেড এবং ওয়াইডার ভার্শন এরশাদের।

কিন্তু এই রিসেন্ট পাস্টের ঘটনা আমরা কেন মনে রাখি নাই? খুব জটিল কোন কারণে এইটা ঘটতেছে বইলা আমার মনেহয় না। মানে, এজিদের দলের লোকরা কেন কারবালার জন্য মাতম করতেছেন না – এই দাবি কি আপনি করতে পারেন?

মানে, যারা নয়া-বাকশালের ally বা মিত্র (মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটি), তারা কাক হয়া কাকের (মিলিটারি, পুলিশ ও আমলাদের) মাংস কেন খাইতেছেন না – এই দাবি করাটা একই রকমের না হইলেও কাছাকাছি ঘটনা তো। অবভিয়াসলি জিনিসটা এতোটা স্ট্রেইট না, কিন্তু বেইজ হিসাবে একটা নন-ডেমোক্রেটিক শাসনরে মাইনা নিয়া আরেকটা নন-ডেমোক্রেটিক শাসনের ক্রিটিক তো করতে পারেন না আপনি। করলেও সেইখানে এইটা মিনিংফুল হইতে পারার কথা না।

আর ধরেন, ‘সাবধান’ হওয়াও তো দরকার, এতে কইরা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী’ পক্ষগুলা শক্তিশালী হয়া উঠার চান্স আছে না! 🙂 মানে, এরশাদ যে একটা ডেমোক্রেটিক গর্ভমেন্টরে (বিএনপি সরকার’রে) সরায়া ক্ষমতা দখল করছিল – এই সত্যি কথাটারেও তো গোপন রাখতে হবে একইসাথে! এই ডিলেমা থিকা যেই হাফ-ট্রুথ বলা হয়, সেইটা যতোটা না এরশাদ-বিরোধিতা তার চাইতে নয়া-বাকশালি রিজিমে স্টেইক বাড়ানোর একটা ঘটনা হয়াই থাকেই তখন।

আমি বলতে চাইতেছি, একটা ডেইটে অনেকগুলা সিগনিফিকেন্ট ঘটনা না-থাকতে পারার জায়গা থিকা এই ‘অস্বীকারের’ ঘটনাটা ঘটে না এতোটা। এইটা থাকেই যে, যেকোন একটা ফিলিংস বা ইভেন্ট অন্য সব ইভেন্টের চাইতে বেশি ইমপ্যাক্টফুল হয়া উঠে। কিন্তু এইটা জাস্ট এইটুকই না।

এইটা আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন এরশাদের লগে বাকশালের আতাঁতগুলা দেখলে, একবার-দুইবার না, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮-সহ অনেকবারই একসাথে কাজ করছে এই দুই ‘স্বৈরাচার’। এইভাবে ছোট-স্বৈরাচার এরশাদের দল জাতীয় পার্টিরে বড়-স্বৈরাচারের খাইয়াও ফেলছে, বড়মাছ যেইভাবে ছোটমাছরে খায়।

এইটা সম্ভব হইছে, এরা ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ বইলা না, বরং এদের নন-ডেমোক্রেটিক জায়গাগুলাতে মিলের কারণে। বামপন্থী দলগুলা বাংলাদেশে বিপ্লবের নাম নন-ডেমোক্রেটিক আইডিওলজিরই সংগঠন। যার ফলে বাকশালি হওয়াটা সহজ, বিএনপি হওয়ার চাইতে। আর এই জায়গাগুলারে ওভারলুক কইরা গেলে এরশাদ-বিরোধিতা কিছু মিন করে না আসলে।

যার ফলে, ১৯৮৩ সালের ১৪ই এপ্রিল রিলিভেন্ট হয়া উঠতে পারে না, এর কোর হিস্ট্রিক্যাল ন্যারেটিভের কারণে। মানে, এই কারণে ইন-সিগনিফিকেন্ট একটা ঘটনাই হয়া আছে। এবং মোস্ট প্রভাবলি এইরকমই হয়া থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত ডেমোক্রেসির জায়গাটারে সেন্টার কইরা ভাবতে রাজি হইতে পারতেছি আমরা।

/২০২১

ইমরুল হাসান

কবি, ফিকশন-রাইটার, ক্রিটিক, ট্রান্সলেটর। জন্ম ১৯৭৫ সালে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

  • February 14, 2023