অদেখা রক্তের দাম

Share

সহিংসতা বলতে হয়তো আমরা বুঝি বিরূপ কিছু, যা স্বাভাবিকতার বাইরে। কিন্তু জিজেক হয়তো আমাদের জিগায়ে বসবে, “আপনার হিসাব আছে সবকিছু স্বাভাবিক রাখার জন্য কী পরিমাণ সহিংসতার দরকার হয় প্রতিনিয়ত?” আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রেইনকোট গল্পটা মনে করতে পারি, যেইখানে পাকিস্তানি রেডিও-টেলিভিশনে বারবার বলা হইতে থাকে, “সিচুয়েশন নর্মাল, সিচুয়েশন নর্মাল।” অথচ তখন তারা পাইকারি হারে মানুষ মারতেসে। স্রেফ কোনো র‍্যাডিকেল পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টারে আমরা ভায়োলেন্স ভাবতে অভ্যস্ত। কিন্তু সবকিছু যেমন আছে তেমন রাখতে প্রতিদিন যে ভয়াবহ ভায়োলেন্স খাটানো হয় তা অতটা প্রকটভাবে চোখে পড়ে না আমাদের। যেকোনো অনাচার জারি রাখতে গেলে স্বাভাবিকতার এই পর্দা, এই ফাসাড বহাল রাখা অনেক জরুরি — এবং তা অনেকসময় রাখা হয় অনেক অদেখা রক্তের দামে।

এইখানে সাব্জেক্টিভ ভায়োলেন্স আর সিস্টেমেটিক ভায়োলেন্সের তফাৎ। আমি আপনারে কোপায়ে ফেললাম, বা মাঝরাস্তায় ছিনতাই করলাম। এগুলা সাব্জেক্টিভ ভায়োলেন্স। এগুলা নিয়া হৈচৈ অনেক হইতে পারে, কারণ ব্লেম কারে করতে হবে তা স্পষ্ট। কিন্তু একটা রিকশাওয়ালা রাস্তায় হীট স্ট্রোকে মারা গেল, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা মেয়ে আত্মহত্যা কইরা বসলো, তখন? বা এইযে এমন একটা শহরে আপনি থাকেন যেইখানে শ্বাস নেয়াটাই আপনার জানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে অল্প বয়সে ফুসফুস বিকল হইয়া আপনি মারা গেলে হয়তো মৃত্যুটা প্রাকৃতিকই মনে হবে। কিন্তু এইখানে প্রাকৃতিক কিছু নাই। প্রতি মুহূর্তে আমাদের উপর যে অবকাঠামোগত সহিংসতা হইতেসে এগুলা তারই আলামত। কাউরে মাইরা ফেলার চেয়ে নিপুণ ও এফিশিয়েন্ট ভায়োলেন্স হইলো তার বাঁইচা থাকার সব পথ বন্ধ কইরা ফেলা। এইসব ক্ষেত্রে কারে ব্লেম করবো তা হয়তো অত সহজে দেখা যায় না, অথবা যায়, কিন্তু সেইটা বলতে যাওয়াও আরেক বিপদ। এই অদৃশ্য অবকাঠামোগত ভায়োলেন্সগুলা শনাক্ত করতে পারা, এগুলার জন্য কারা দায়ী সেই ব্যাপারে আরেকটু সজাগ হওয়ার অভ্যাস করা গেলে হয়তো ভালো।

এইটা অবশ্য বইটার স্রেফ একটা অংশ নিয়াই আলাপ করলাম। এছাড়া ভায়োলেন্সের সাথে ভাষা, ভালোবাসা, আইডিয়োলজি ইত্যাদির সম্পর্ক নিয়াও নানান ইনসাইট আছে। পড়তে পারেন।

মাহীন হক

কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।

  • April 29, 2024