মিলিটারি ক্যু

Share

১৯৭৫ সালে একটা মিলিটারি ক্যু আসলে আওমি-লিগরে বাঁচায়া দিছিল, যেইভাবে বাকশাল তৈরি করার ভিতর দিয়া এই পলিটিকাল দল’টা সুইসাইড করছিল।

এই কারণে, তারা এখনো মনে করে যে, তাদের লাস্ট চান্স আসলে একটা মিলিটারি ক্যু-ই হইতে পারে; যা তাদেরকে পলিটিকালি রিভাইব করতে হেল্প করবে; আবারো বাংলাদেশের পিপলের কাছে গিয়া নাকি-কান্দা কাইন্দা মাফ চাইতে পারবে! কিন্তু এইটার কোন চান্স আমি দেখি না। যদিও অনেকে, ইনক্লুডিং ইন্ডিয়া অই জায়গাগুলারে উসকায়া দিতে চাইবে।

কিন্তু বাংলাদেশের মিলিটারি পাকিস্তানি মিলিটারি না। এই কথার মানে হইতেছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো দীর্ঘকাল সামরিক-শাসনের ইতিহাস নাই; ইভেন বাংলাদেশ স্বাধীন হইছে সামরিক-শাসনের প্রতিবাদে, এবং ডেমোক্রেসির দাবিতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়েও বে-সামরিক গর্ভমেন্টের আন্ডারে মিলিটারি যুদ্ধ করছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ক্যু’র পরে বে-সামরিক গর্ভমেন্ট ফর্ম করা হইছে, এবং অই গর্ভমেন্ট মিলিটারি’র মেজর’রা চালাইতেছিল বইলাই ৩রা নভেম্বরের পাল্টা ক্যু হইছিল, যদিও টিকতে পারে নাই; কিন্তু ৭ই নভেম্বরের সরকার অনেকদিন সাসটেইন করছিল কারণ সেইখানে পিপলের সার্পোট ছিল, “সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান” একটা প্রপাগান্ডা-টার্ম হিসাবে আমরা রিড করতে চাইলেও এর ভিতরে কোন ট্রুথ ছিল না – এইটা বললে সেইটা মিছা-কথাই হবে। এবং অই সময়টা থিকাই বাংলাদেশে লিবারাল-ডেমোক্রেসির শুরুটা পসিবল হইছিল। এরশাদের রিজিম কখনোই স্মুথ ছিল না, বাংলাদেশের মানুশ কখনোই তারে পুরাপুরি একসেপ্ট করে নাই, যদিও আওমি-লিগই ১৯৮৬ সালে তারে এক ধরণের বৈধতা দিছিল, কিন্তু তা-ও টিকাইতে পারে নাই। ২০০৭-এর ১/১১’র গর্ভমেন্টও টিইকা থাকতে পারে নাই। এখনো ‘সুশীল’ এবং পুরানা বাম-বিপ্লবী গং দেশে ডেমোক্রেটিক শাসনের বিপরীতে ‘বিপ্লবী-পণা’র নামে একটা মিলিটারি ক্যু’র অপশন সামনে নিয়া আসতে চাইতেছে। কারণ এইটা ছাড়া পালানোর আর কোন রাস্তা নাই। যেই মিলিটারি-আমলা-মিডিয়া’র হাত ধইরা নয়া বাকশালের শাসনের শুরু হইছিল, সেই রাস্তা দিয়াই তারা পালাইতে চাইতেছে এখন।

আমি বলতে চাইতেছি, বাংলাদেশের এখনকার পলিটিকাল কনটেক্সটে মিলিটারি ক্যু একটা অপশন না, বরং নয়া বাকশালের শেষ আশা। আরেকটা মিলিটারি-আমলা-মিডিয়া ক্যু’র কন্সপিরেসিরে সম্ভব কইরা তোলার চেষ্টার ভিতরে তাদের থাকতে থাকার কথা।

কিন্তু হিস্ট্রি সাক্ষী দেয়, বাংলাদেশের মানুশ মিলিটারি-শাসনরে কোনদিনই মাইনা নেয় নাই, এবং পলিটিকালি, ইকনোমিকালি এবং কালচারালি মিলিটারি-শাসন বাংলাদেশে অপশন হিসাবে এমার্জ করতে পারার কথা না।

পলিটিালি, রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ কোনদিনই একটা বড়সড় মিলিটারি-পাওয়ার হওয়ার জন্য ইন্সপায়ারড ছিল না; পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ এবং ইন্ডিয়ার আগ্রাসী বর্ডার-কিলিংয়ের পরেও, কারণ উইথ-আউট পিপলস পাওয়ার মিলিটারির পক্ষে টিইকা থাকা পসিবল না! যার ফলে পাকিস্তানে যেইরকম দেশের সব আশা একটা সিঙ্গেল ইন্সিটিটিউশন হিসাবে মিলিটারি’র উপরে হেন্ড-ওভার করা হইছে, একটা রাষ্ট্রিয় ইগো হিসাবে, সেইটা বাংলাদেশে রিভার্সই বরং অনেকটা। এমনকি ইন্ডিয়াতেও মিলিটারি যেইরকম একটা সেপারেট ফোর্স, লিবারাল ডেমোক্রেসি-তে, ‘অহিংস’ স্বাধীনতার কারণে, বাংলাদেশে এতোটা আলাদা ঘটনাও না; কিন্তু এই ইন্ট্রিগ্রেশনটা একটা বেলেন্স অফ পাওয়ারের ভিতর দিয়াই এফেক্টিভ থাকে; বরং পিপলস পাওয়ার বইলা যেই ইন্সিটিটিউশনগুলা – আমলা-পুলিশ, বিচার-বিভাগ, মিডিয়া তারা-ই মিলিটারি’রে একটা পলিটিকাল পাওয়ার হিসাবে ইনক্লুড করতে বেশি ইন্টারেস্টেড। কিন্তু তারা আসলে বাংলাদেশে সত্যিকারভাবে মিনিমাম সেন্সেও পিপলস রিপ্রেজেন্টেটিভ না।

ইকনোমিকালি, বাংলাদেশের মিলিটারি ইকনোমিকালি বরং অনেক বেশি ইউএন-বেইজড মিশনগুলার উপরে বেশি ডিপেন্ডেড। বাংলাদেশের বাজেটে ‘সামরিক-ব্যয়’ যতই বাড়তে থাকুক, ‘উন্নয়ন-প্রকল্পে’ যতই এনগেইজমেন্ট বাড়ুক, তাদেরকে আমলা-শ্রেণির দিকেই মুখ কইরা থাকতে হয়। সেইটা ইন্ডিপেন্ডেড ইন্সিটিটিউশন হিসাবে কখনোই প্রাউড ফিল করার মতো ঘটনা না। এমনকি তাদের যেই কোর জায়গা সেইখান থিকা সইরা যাওয়ারও ঘটনা। এখন মনে হইতে পারে যে, পলিটিকাল পাওয়ারের জায়গাটা দখল করলে সেইখানে ইকনোমিক জায়গাটা এনশিওরড হইতে পারে; কিন্তু এতে কইরা পলিটিকালি বরং হিতে-বিপরীত হওয়ার চান্স-ই বেশি। মানে, এখন সব দোষ যেইরকম একটা অবৈধ-সরকারের ঘাড়ে চাপায়া দেয়া যাইতেছে, তখন অইটারে ফেইস করা লাগবে, যা একটা পলিটিকাল দুশমনিরে আন-এভয়েডেবল কইরা ইকনোমিক গেইনের রাস্তাটারে আরো রিস্কি কইরা তুলবে।

কালচারালিও যদি দেখেন, বাংলাদেশের মিলিটারির ইতিহাসও ‘বঞ্চণা ও লাঞ্চণা’রই ইতিহাস; ব্রিটিশ ইন্ডিয়াতে কখনোই ‘গৌরবোজ্জ্বল’ অবস্থা ছিল না, পাকিস্তান আমলে তো আরো বাজে-অবস্থাতেই পড়তে হইছিল; এমনকি আমি মনে করি মিলিটারি-তে যেই ডিভাইডেশনটা ছিল, সেইটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধরে আরো মাস্ট কইরা তুলছিল। মানে, বাংলাদেশে মিলিটারি’র যেই প্রাইড সেইটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সাথে খুবই ক্লোজলি রিলিটেড। পাকিস্তানের প্রদেশ হিসাবে যেই অবস্থা ছিল না, প্রো-ইন্ডিয়ান ফোর্স হওয়ার ভিতর দিয়া অই বাজে-অবস্থাটাতেই ফিরা যাওয়া হবে আবার।

মানে, এইখানে তো যুক্তি-তথ্য দিয়া প্রমাণ করার কিছু নাই। কিন্তু আমি যেইটা বলতে চাইতেছি, একটা এন্টি-পিপল পজিশনের বাইরে গিয়া বাংলাদেশের এখনকার পলিটিকাল কনটেক্সটে কোন মিলিটারি ক্যু’র ঘটনা ঘটতে পারে না। আর যদি সেইটা ঘটেও, সেইটা ইন্সিটিটিউশন হিসাবে মিলিটারি’র জন্য বাজে ঘটনাই হবে আরেকটা।

ইমরুল হাসান

কবি, ক্রিটিক, ফিকশন-রাইটার, ট্রান্সলেটর। জন্ম ১৯৭৫ সালে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

  • August 16, 2023