‘কারণ’ এর এজেন্ডা

Share

কোন খারাপের বা ভালোর পেছনে কি ‘কারণ’ হাজির হইতেছে সেই ব্যাপারে হুশিয়ার থাকা দরকার। কারণ ‘কারণ’গুলি এজেন্ডানিরপেক্ষ নয়। ‘কারণ’ আবিষ্কার ও উৎপাদনের পিছনে থাকে ইডিওলজিকাল বুনিয়াদ শক্ত করার ধান্ধা। এবং সঠিক ‘কারণ’গুলি এইভাবে ফলস ‘কারণ’গুলির ভেতর ভেনিশ হইয়া যাওয়ার বিপদ তো থাকেই।

যেমন ধরেন রেপের কারণ হিসাবে যথেষ্ট পর্দা না থাকা ‘কারণ’ হিসাবে কেমন? এই ধরনের ‘কারণ’রে আমরা বলতে পারি ব্লেইম শিফটিং ‘কারণ’। অপরাধের এগেইনস্টে ভিক্টিম কেন প্রটেকশন নেয়নাই, সেইটা তখন আরেকটা অপরাধ হইয়া দাঁড়ায়। নতুন নতুনভাবে মানুষরে ইনক্রিমিনেট করতে চাওয়া এই ‘কারণ’গুলির ব্যাপারে হুশিয়ার থাকতে পারেন।

তারপর ধরেন, কোক স্টুডিওর নাসেক নাসেক গানটা খুবই খারাপ হইছে। এত আয়োজন কইরা এমন বাজে জিনিস কিভাবে বানানো যাইতে পারে তা নিয়া ভাবছি অনেক, কিনার করতে পারিনাই। কিন্তু একজন এক্লেইমড আতেল এই গানের খারাপিরে ডেসক্রাইব করতে গিয়া সিঙ্গার অনিমেষ(নামটা ভুল হইলে ধরায়ে দিয়েন)রে নিয়া কইলেন, গান বাজনা হইল সাধনার ব্যাপার, ফেসবুক-আটিস্টদের দিয়া এগুলা হইবে না। ফেসবুকে ডিসপ্লেকৃত আট-কালচার লইয়া স্থিত স্টেরিওটাইপরে রিইনফোর্স করে এগুলি, ফেসবুকে করা কাজকামরে সেরেফ ফেসভেলু দিয়া জাজ করার এজেন্ডা এইসব ‘কারণ’এর ভেতর থাকে। ‘কারণ’ হিসাবে এগুলিরে রিজেক্ট করতে পারেন।

ফেসিবাদের তুঙ্গে হিস্টেরিক জনতার প্রেজেন্স থাকেই। এই কারণে রাইসু মহাজন কইলেন, আম জনতারে সেন্টার কইরা রাজনীতি মানেই ফেসিবাদি রাজনীতি। এমন পারভেজ আলম বা আলতাফ পারভেজদের আলাপেও পাবেন, জনতারে পাশে চাওয়াই হইল পপুলিজম। এইভাবে এনারা জনতারে দূরে দূরে রাখার ছোট ছোট রাখার বা নিজেদের বেইলহীনতাকে গ্লোরিফাই করার একটা অজুহাত পান বটে। কিন্তু এইসব ‘কারণ’ মূলত পাওয়ারের পজিশনরে আনচেকড রাখতেই উৎপাদিত ও ব্যবহৃত হইয়া থাকে। এগুলি পপুলিজমেরই ঘটনা, কারণ কালে এগুলি পিপলরে এলিটিস্ট ভাবধারায় উজ্জীবিত কইরা রাখে। রিয়েল পপুলিজম হইল এইটাই, যেইটা পিপলরে পিপলের ওয়েলফেয়ারের সাথে সংসর্গহীন কজে(‘কারণে’) বেহুশ মাতাল বানায়ে রাখে। এইসব ‘কারণ’রে পাত্তা দিয়েন না।

ষাইটের দশকে পিপল পাকিস্তানি পলিটিকাল এলিটদের উপর খেইপা গেছিল। এই খেপার জায়গাখান এক্সপ্লয়েট কইরা এইখানকার আতেল-এক্টিভিষ্টরা তাদের রুচিমাফিক জমিদারি কালচারের ট্রেন্ড শুরু কইরা দিলো। এরা পিপলের লগে লগে থাইকা পিপলের মিছিলে রঠা বাজায়ে দিলো। দুইটার ফিউশনে আপনের মনে হইবে, পিপলই বুঝিবা পাকিস্তানের উপর রাগ হইয়া গানটান বাজাইতেছে। যেমন ধরেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন যেন ঘটাইছে লোকে পরমিত বাংলা কায়েমের জন্য! যেন পরমিত মাপা মাপা গান বাজনা শুনতে চাইয়াও লোকে পাকিস্তানের পলিটিকাল ক্লাসের প্রতি ক্ষোভ দেখাইয়া থাকতে পারেন! মানুষের ক্ষোভরে কেবল একটা পুচকে গোষ্ঠীর রুচিব্যবস্থার মেইনস্ট্রিমাইজেশনে মেনিপুলেট করতে পারে এমন ‘কারণ’ তৈয়ার হইতেছে কিনা খেয়াল রাখেন। ধরেন, এখন বাকশাল খেদাইতে লোকে রাস্তায় নামলো, ওদিকে হুজুরেরা বয়ান দিলো দেশে ইসলাম কায়েম করতেই লোকে রাস্তায় নামছে। বয়ান আর ভীড়ের ফিউশন কিন্তু ডেঞ্জারাস।

আবার অনেক ‘কারণ’ নির্মাণ হয়, মানুশের জাইগা ওঠারে নিউট্রালাইজ করতেও। মানুশ ভোটাধিকার কায়েমের জন্য, ডেমোক্রেসি রিএস্টাব্লিশ করতে মাঠে নামলো আর মিডিয়াগুলি কারণ বানায়া দিলো, বিএনপি আওয়ামী লীগের গেঞ্জাম বা, জামাত শিবিরের তৎপরতা। অনেক সময় সেই আন্দোলন সফল হইলেও ইতিহাসে এগুলি ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ চক্রান্তের ফলাফল হিসাবে চালু থাকতে থাকে, এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি নিজেদের ভিক্টিম হিসাবে রিলেভেন্ট কইরা রাখে। তাই মানুষের জাইগা ওঠার ‘কারণ’ হিসাবে কি সামনে আসতেছে তাও নজর রাখেন।

২০২২

ইব্রাকর ঝিল্লী

কবি, ক্রিটিক।

  • August 5, 2023