[একটা] দেশের কথা – রক মনু

Share

একটা দেশের কথা ভাবেন। দেশটা ১০/১৫ বছর একটা মাফিয়া তালুকদারি শাশনে আছিলো। কিন্তু কাগজে লেখা ডেমোক্রেটিক। ফলে অপোজিশন পলিটিকেল পাট্টি আছে, অফিশিয়ালি, শরকারি দলও আছে, কিন্তু ইলেকশন নাই, লাগে না; দেশের এলিটেরা, ছিভিল ছোছাইটি মাফিয়া তালুকদারির শেয়ার হোল্ডার, তারা ইলেকশন চায় না, কেননা, ইলেকশনে ছোটলোকেরা ইলেকটেড হইতে পারে; ওদিকে, ঐ এলিট ছিভিল ছোছাইটির একটা মস্ত ফোবিয়ার নাম রিলিজিয়ন, কিন্তু আমজনতা গড়পরতা ধার্মিক এবং খুবই ইলেকশন-নাগর, বহু জাতি-ধর্মের মানুশের ঐ দেশে ইলেকশনই একমাত্র কমন মচ্ছব।

আমজনতার মনের পুরা উল্টা এমন ২/৩% এলিট তালুকদারের এমন শাশনে জরুর ঘটনা হইলো–শরকার/তালুকদার আর রাশ্টো মোটেই জুদা থাকতে না পারা, রাশ্টের শকল দপ্তর/অর্গান তখন তালুকদারের অর্গান হইয়া ওঠে, ৯৫%+ জনতার লগে ডায়ালেকটিক্সে থাকার কারনে রাশ্টো আর শরকারের ডায়ালেক্টিক্স পুরা মুইছা ফেলতে হয়, নাইলে টিকতে পারে না তালুকদার। জনতার ৩০/৪০% জদি শরকারের পলিটিকেল শরিক হইতো, তখন ঐ জনতারে হাতে রাখতে জাইয়াই রাশ্টের লগে শরকারের একটা ডায়ালেক্টিক রিশতা থাকতে হইতো!

এখন রাশ্টের শকল দপ্তর জখন তালুকদার শরকারের অর্গান, তখন অপোজিশনের হালত কেমন হবার কথা? অপোজিশন তখন তাবত জনতার ভিজিবল ছুরত, জনতার রাগ+ঘেন্না অপোজিশনের ছুরত থিকা ঠিকরায়া বাইরায় এবং শেইটারে দমন করে শরকারের অর্গান হিশাবে রাশ্টের দপ্তরগুলা। তখন জাস্টিছ ছিস্টেম থিকা মেডিকেল ছিস্টেম শরকারের লাঠি হইয়া ওঠে; খুন-গুম-ভুয়া মেডিকেল ছার্টিফিকেট-ভুয়া বিচার-জামিন না থাকা-কোরোছফায়ারে খুন-পুলিশ রিমান্ড চলতে থাকে।

এমনটা চলতে থাকার শবচে বড়ো কুফল হইলো, এমনকি অপোজিশনের মরালও দুর্বল হইয়া পড়তে পারে! মানে মওকা পাইলেই গনধোলাই, মবের হাতে খুন ঘটবে, তালুকদারের পতনে তুমুল ভায়োলেন্সের শম্ভাবনা, এতো বছরের রাগ+ঘেন্নায় ভরা মনে মরাল আর জাস্টিছ/ইনছাফ থাকার জমিন পায় না পেরায়ই!

তালুকদারের পতনের পরে তাই খুবই হুশিয়ার কদম ফেলা দরকার, অপোজিশনের তখন এলেমদারি দিয়া ইমানদারির নিশান উড়াইতে হবে, হক আর ইনছাফের খেলাপ জেনো না হয়, বন্দির হক আদায় করতে পারতে হবে!

মুশকিল হইলো, ঐ দেশে তখন হক আর ইনছাফ কায়েম করার মতো কোন দপ্তরই নাই, খোদ রাশ্টোই পেরায় নাই! নয়া শরকার আইলে রাশ্টের দপ্তরগুলা নিজেরাই তখন নয়া শরকারেরও অর্গান হইয়া উঠতে চাইবে, কেননা, তাগো অমনই খাছলত বানাইয়া রাইখা গেছে আগের তালুকদার! ওদিকে, পয়শাপাতির খেল শুরু হইতে পারে, আশল কিরমিনালরা, শবচে বড়ো জালেমেরা পয়শার জোরে বহাল তবিয়ত থাইকা জাইতে পারে! আবার ঐ দপ্তরগুলা তাদের আগের পাপের ফল এড়াইতেও নয়া শরকারের লগে খাতির জমাইতে চাইবে! নয়া শরকারেও তো পয়শা খাবার লোক থাকবে বেশুমার। এই শবের জরুর ফল হইলো, নয়া অবিচার আর হকের খেলাপ এবং রাশ্টের চরিত্র ঠিক আগের মতোই থাইকা জাওয়া!

তাইলে উপায় কি, কেমনে ইনছাফের দিকে কদমে কদমে আগানো শুরু করা জায়? উপায় হইলো ইন্টারনেশনাল হইয়া ওঠা। মানে ইউএন অথরিটিরে ডাকা উচিত তখন!

শবচে বড়ো খেয়াল রাখার ব্যাপার হইলো–নিয়ত করলেন ইনছাফ কায়েমের, বাস্তবে জুলুমের বদলা লইলেন ছেরেফ! ইনছাফ এমন একটা জিনিশ, মজলুম তাতে পুরা খুশি হয় না শুরুতে; কেননা, মজলুমের মনে বহু বছরের ঘেন্না জমা আছে, রাগ আছে, হারাবার বেদনায় হয়তো আউলা হইয়া আছে মজলুমের বিবেক; আরেকজনের, মানে দুশমনের হকের ভাবনার তুলনায় মনের টান তখন চালায় মানুশেরে (১৯৭১ শালে গুলিস্তানে বেয়নেট দিয়া খোচাইয়া রাজাকার মারার ঘটনা মনে কইরা দেখতে পারেন!)।

তবে শুরুতে আমাদের চিনতে হবে মুছিবতের গোড়াটা! শেই গোড়ার নাম ‘মালিক ছিনড্রোম’; রাশ্টের চাকরেরা, জাদের হবার কথা পাবলিকের খাদেম, মাফিয়া তালুকদারির বাকশালি শাশন তাগো বানাইয়া তুলছে মালিক আর পাবলিকরে তারা গোলাম মালুম করে! এইটা রাশ্টের চাকরদের কোন এক জনের বেক্তিগত ভাবনা না, এইটা তাগো দপ্তরের ভাবনা, মানে ভাবনাটা খুবই মজবুতভাবে ইন্সটিটুশনালাইজড!
তার মানে হইলো, ঐটা–রাশ্টের কামলাদের মালিক ছিনড্রোম থিকা বাইর করাটা কোন একটা শরকারের কয় বছরের শৎ শাশনের মামলা না মোটেই, ঐটা অতি লম্বা একটা পোছেছ! ছেরেফ তাই না, মস্ত ঝুকিও আছে; এমন আমলাতন্ত্র এমন একটা দলা পাকাইয়া থাকে জে, শে নিজেই এক অর্গানিজম–নিজেরে মালিক ভাবা কাউকে জদি আপনে খাদেম বানাইয়া দিতে চান, তখন তার ছারভাইভাল ইন্সটিংক্ট একটিভ হইয়া উঠবে, শে তখন আপনারে খুনের মওকা তালাশ করতে থাকবে।

তাই তাড়াহুড়ার উপায় নাই, আলগোছে মনজিল হাছিল করতে হবে। শুরুতে একটা অপ্টিমিস্টিক আন্দাজ করা জাইতে পারে জে, ৫০% কামলা/আমলার মরাল মেরামতের কাবিল আছে; মানে আপনে জদি ভালোর কদর শুরু করেন, মেরিটোক্রেছি চালু করেন, তাইলে পেরায় ৫০% খাদেম হইয়া উঠতে রাজি হবে। এই ৫০% জদি খাদেম হয়, তাইলে খুব শম্ভব নয়া শরকারের মরতে হবে না, তারা রাশ্টের পারপাছকে পেরায়োরিটি দিতে রাজি হবে এবং বাকি ৫০% কে ঠেকাইতে মদদ দেবে। এইভাবে শুরুতেই আপনের ঐ দলাটারে ভাংতে হবে। তারপর আরো কিছু পাইবেন লগে।

কিন্তু এই দেশটা এমন এক হালতে পৌছাইয়া গেছে জে, ছেরেফ ইন্টারনাল থাইকা ইনছাফ কায়েম করা জাবে না! কারন, লম্বা এই তালুকদারি শাশনে খাইয়া পইরা বাচতে বহু মানুশ জালেমের লগে হরেক শুতায় জড়াইয়া গেছে, ইজ্জত বাচাইতে জৌনবাজারে জালেমের শর্তে নারাজ হইতে পারে নাই বহু মানুশ! জেমন ধরেন, রাশ্টের একটা কামের ঠিকাদারি নিলো কোন এক তালুকদার, তারপর নিজে কাম করলো না, ছেরেফ ৩০% রাইখা ছাব-কন্টাক্ট দিলো ছারভাইভাল মোডে নাইমা জাওয়া কেউ একজন, জেই লোক কিনা মনে জালেমের উৎখাত চায়! উনি তারপর আরো ৩০% দিলো রাশ্টের কয়েকটা দপ্তরে, নিজে রাখলো ২০%, বাকি ২০% দিয়া কাম উঠাইয়া দিলো। আবার ধরেন, বেশুমার হামলা-মামলায় জেরবার কেউ নিজের বোনেরে ফুশলাইতে থাকলো জালেমদের কাউকে বিয়া করতে, শেই বোনও জালেমের কাছে গনিমতের মাল হবার বদলে কোন একজনরে বিয়া করাটাই ভালো মনে করতে পারে! এই জে পয়শা এবং জৌন রিশতা হইলো জালেমের লগে, এইগুলা আখেরে, জালেমের পতনের পরে তারে বাচাইয়া দেবে, মজলুমই বাচাইয়া দেবে জালেমেরে!

ছো, ব্যাপারটা কঠিন; নয়া শরকারের ইনছাফ কায়েম তো দুর, ভালো একটা ইলেকশনই খুব কঠিন!

ভালো একটা ইলেকশন ঘটাইতে নির্দল শরকারের ছাজেশন থাকে ময়দানে। কিন্তু তাতেও ভালো ইলেকশন ঘটানো কঠিন। এই কারনেই আমার হিশাবে কয়, ইউএন অথরিটিরে ডাইকা আনা দরকার।

ধরেন, ঐ দেশটা বহু ইউএন চার্টারে দস্তখত দিছে, তার ভিতর একটা হইলো হিউম্যান রাইটস্ বা মানুশের হক। একটা ডেমোক্রেটিক রাশ্টে ভোট দিতে পারতে হবে, এইটা মানুশের একটা বুনিয়াদি হক। আইছিছি, মানে ইন্টারনেশনাল জেই আদালতটা আছে, শেইখানেও ঐ দেশটা একজন মেম্বার; আইছিছি এবং ইউএনের একটা ঘন রিশতা আছে। মানে হইলো, ঐ দেশটা ইন্টারনেশনাল আদালতের আওতার ভিতর এবং ইউএন আইনগুলা ঐ দেশেও এপ্লিকেবল।

তো, আইছিছি মাঝে মাঝেই পরোয়ানা জারি করে, ধইরা বিচার করে; কিন্তু জেনোছাইড বা পাইকারি খুন বা রেপকে জেমনি মস্ত কেরাইম হিসাবে ধরে, মানুশের হকের ভায়োলেশন হিশাবে ধরে, ভোট/ইলেকশনের ব্যাপারে তেমন গুরুত্ত দেয় না! কিন্তু এইটা খুবই দরকারি!
তাই, ইলেকশনের আগে একটা নির্দল শরকার জেমন হওয়া দরকার, ঠিক ততোটাই দরকার হইলো, গেরেপ্তারের খমতাঅলা আইছিছি/ইউএন অথরিটি, ছেরেফ ইলেকশন অবজার্ভেশন আর রিপোর্ট দিতেই ইউএন দায়িত্ত পালন হয় না, কিরমিনালদের পানিশমেন্ট হইতে হবে!

এবং ইলেকশনের পরেও আইছিছি টেরাইবুলাল থাকতে হবে ঐ দেশে; ইনছাফ বা জাস্টিছ এনশিওর না করলে ভায়োলেন্স বাড়ে, মানুশের মরাল দুর্বল হইতে থাকে, ভায়োলেন্সের খমতাই ঐ দেশে রেছপেক্ট পাবার শর্ত হইয়া ওঠে, মানুশের হকের ভায়োলেশন বাড়তে থাকে। ইউএন এবং আইছিছির দায়িত্ত হইলো, তার তার মেম্বার রাশ্টোগুলায় মানুশের হকের পাহারাদার হওয়া, ইনছাফ কায়েম করা…

//১১জুলাই ২০২৩ #রকমশাহেরবয়ান

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

  • July 13, 2023