লাঠিয়াল ফারুক: ইন সিনেমা এন্ড ইন রিয়েল-লাইফ – ইমরুল হাসান

Share

একজন মানুশ মারা যাওয়ার পরে তার কোন কাজটা দিয়া তারে মনে রাখবো আমরা? এইটা ঠিক টাফ কোন ডিলেমা না, বরং এইরকম মনে-করার বা মনে-রাখার কিছু প্যাটার্ন আসলে আছে।

যেমন, আমার অজারভেশন হইতেছে, বেটা-মানুশের ব্যাপারে তার পাবলিক-লাইফরেই প্রায়োরিটি দেয়া হয় বেশি; যে সমাজে কি কি কাজ উনি করছেন, তার সিগনিফিকেন্স কি ছিল।… পারসোনাল লাইফ মেটার করে-না না, অইটা সেকেন্ডারি ঘটনাই বেশিরভাগ সময়, যদি না বড় কোন অন্যায় উনি কইরা থাকেন, পারসোনাল রিলেশনে, কারো সাথে।

কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে একইরকম না, পারসোনাল-লাইফটারেই প্রায়োরিটি দেয়া হয় বেশি, উনি কতো লক্ষী-মেয়ে, সার্পোটিভ-বইন, কেয়ারিং-ওয়াইফ, ভালো-মা এবং ইস্মার্ট দাদী-নানী ছিলেন। মানে, সোশাল কন্ট্রিবিউশনের জায়গাগুলারে যে খেয়াল করা হয় না – তা না, কিন্তু এইরকম উদাহারণ তো কমই। নায়িকা, লেখিকা, ইন্টেলেকচুয়াল, এক্টিভিস্ট হিসাবে যারা আছেন, উনাদেরকে বাতিল কইরা দেয়া হয় – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু রিকগনিশনের জায়গাগুলা কমই।

এইটা জাস্ট গ্রসলি বলা। একসপেশন তো আছেই।

২.
কিন্তু যারা পাবলিক-ফিগার, তারা ভালো-খারাপ অনেক কাজই তো করেন। তাদের খারাপ-কাজগুলাই কি মনে রাখবো আমরা, ভালো-কাজের কথা কি বলবো না? বা খালি ভালো-কাজের কথাই বলবো, খারাপ-কাজের কথা উঠলে চুপ কইরা থাকবো?

এইখানেও আমার অবজারভেশন হইতেছে সার্টেন ক্রাইটেরিয়া এফেক্টিভ থাকে। ধরেন, একজন ভালো-কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, আর্টিস্ট… তার আর্ট যতই ভালো হোক, তার ইমিডিয়েট পলিটিকাল পজিশনটারেই আমরা বিবেচনায় রাখি। যেমন ধরেন, হাইডেগার, উনার চিন্তার কন্ট্রিবিউশনের চাইতে উনার পলিটিকাল পজিশন ইম্পর্টেন্ট হয়া উঠছিল তো একটা সময়ে। বা এজরা পাউন্ড। বাঁইচা থাকতে খুবই বাজে-অবস্থায় তো ছিলেনই, মারা-যাওয়ার পরেও উনারে মাফ করাটা কঠিনই হয় অনেকের। মানে, আর্টের বিচারের চাইতে আর্টিস্টের পলিটিকাল-পজিশনই ইমিডিয়েট কন্সিডারেশনের ঘটনা।

কিন্তু একজন আর্টিস্টের বিচার এইখানেই শেষ না, তার আল্টিমেট বিচার আসলে কালচারাল বিচারটাই। মানে, যেই ফিল্ডে উনি ছিলেন, সেই ফিল্ডে উনার কি সিগনিফিকেন্স বা কি ভ্যালু উনি অ্যাড করছেন। কিন্তু এইটা বুঝার জন্য ওয়েট করতে হয়। অনেকের অই গুড-লাক থাকে না, রিলিভেন্ট হয়া থাকতে পারেন না। কিন্তু পারেন কি পারেন না – সেইটা আসলে কয়েকটা জেনারেশনের পরের ঘটনাই। [তবে তার আর্টিস্টিক কন্ট্রিবিউশন আর পলিটিকাল পজিশন এতোটা আলাদা আলাদা ঘটনা না, বরং সময়ের সাথে সাথে সেই লিংকগুলা স্পষ্টই হইতে থাকে কোন না কোনভাবে।]

৩.
তো, নায়ক ফারুক’রে কিভাবে মনে রাখবো আমরা?

কবরী মারা-যাওয়ার পরে উনারে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিতে রাজি ছিলাম আমি। কিন্তু ফারুক এই ডাউট ডিজার্ভ করেন বইলা আমার মনেহয় না। উনি জাইনা-শুইনাই জালিমের দলে নাম লেখাইছিলেন। আমার ধারণা, শেষ বয়সে মানুশের একটা রিগকনিশনের ক্রেভিং তৈরি হয়। সবাই সেইটা এড়াইতে পারেন না।

খান আতাউর রহমান একবার এফডিসি-তে রিকশা নিয়া ঢুকতে নেয়ার সময় এফডিসির দারোয়ান তারে ঢুকতে দেয় নাই, কইছিল, এমডি’র আদেশ – রিকশা নিয়া কেউ ভিতরে ঢুকতে পারবে না; তখন উনি খেইপা গেছিলেন, চড়-থাপ্পড়ও মারছিলেন মনেহয়, বলছিলেন, তোর এমডি’র নাম কেউ মনে রাখবে না, কিন্তু বাংলাদেশের মানুশ খান আতা’রে মনে রাখবে। এই কনফিডেন্স মেবি ফারুকের কমই ছিল। 🙁 থাকলে, জালিমের দলে নাম লেখাইতে হয়তো একটু হেসিটেড করতে পারতেন। এই কারণে একজন আর্টিস্টের (সিউডো শো-অফ না, বরং) সেলফ-কনফিডেন্স এবং আর্টিস্টিক-সেন্স জরুরি একটা জিনিস। যেইটা তার পলিটিকাল-পজিশনের জায়গাটাতে কন্ট্রিবিউট করতে পারে অনেক বেশি।

নায়ক ফারুক খুব ক্রুশিয়াল মোমেন্টে বাংলাদেশি-সিনেমার নায়ক হওয়ার সুযোগ পাইছিলেন, তখন বাংলাদেশি-সিনেমা একটা হাই-টাইম পার করতেছে। কিন্তু আন-ফরচুনেটলি একজন পপুলার হিরো হিসাবে কোন রিমার্কেবল সিগনেচার ক্রিয়েট করতে পারেন নাই। একজন আলা-ভোলা গেরামের জুয়ান পোলা থিকা শহরের সৎ-মাস্তানের রোলেই উনারে লোকেট করা যাইতো বেশি। মেবি কবরী ও ববিতার নায়ক হিসাবেই উনারে বেশি মনে রাখবো আমরা। এর বাইরে উনার যদি কোন সিগনিফিকেন্স থাকে, সময় সেইটা বইলা দিবে। কিন্তু আপাতত, একটা সময়ের নস্টালজিয়া হিসাবেই উনারে মনে রাখার কথা আমাদের।

কিন্তু সেইটা উনার পলিটিকাল-পজিশনটারে কতটুক ছাপায়া উঠতে পারবে – সেইটা একটা কোশ্চেনই এখনো। যার বিচার মেবি আমাদের হাতে নাই এতোটা। কারণ জমিদারের লাঠিয়ালদেরকে লাঠিয়াল হিসাবেই মনে রাখতে হবে আমাদের। [এইখানে মনে রাখা দরকার ‘সারেং বউ’ কিংবা ‘সুজন সখী’র চাইতে ‘লাঠিয়াল’-ই অনেক বেশি ফারুকের সিনেমা আসলে। রিয়েল-লাইফে যেইখানে উনার রোল’টা রিভার্স একটা ঘটনাই, সিনেমার তুলনায়।]

এইখানে ভুল করার সুযোগ আসলে আমাদের নাই। যদি বাংলাদেশে কোনদিন বাকশালি-জুলুমের শেষ হয়, সেইদিন মেবি ফারুকের সিনেমাটিক এচিভমেন্ট নিয়া আরো কথা বলতে পারবো আমরা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুক!

লাঠিয়াল ছবির একটা সিন:

@imrulrussell

আমি আরটিস! #ফারুক লাঠিয়াল

♬ original sound – imrulrussell

ইমরুল হাসান

কবি, ক্রিটিক, ফিকশন-রাইটার, ট্রান্সলেটর। জন্ম ১৯৭৫ সালে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

  • May 15, 2023