আমরা হীনমন্যতা নিয়ে বড় হই নাই – শেখ সাদ্দাম হোসেন

Share

সাজ্জাদ শরিফের প্রশ্নে দিপেশ চক্রবর্তী বলতেছেন, “বাঙালদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথও ঠাট্টা করতেন। ছিন্নপত্র–এ তিনি লিখেছেন, ‘ঘোড়ার’ কথাকে বাঙালরা বলে ‘গোরা’র কথা। বাঙাল অ-সভ্য, তাকে সভ্য করতে হবে। ঠাট্টা হলেও ছোটবেলায় এটা আমাদের শুনতে হয়েছে।”

বাংলাদেশের মানুষকে অ-সভ্য মনে করে এদেরকে সভ্য করে তোলার দায়িত্ব মেলা আগে থেকেই নিয়ে নিয়েছেন কোলকাতার পণ্ডিত মশাইরা। ব্রাহ্মণ্যবাদ, হিন্দুত্ববাদ, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এসবের রুট বাঙ্গালকে অ-সভ্য থেকে সভ্য করে তুলতে চাওয়ার মধ্যেই রয়েছে।

বিষয়টাকে একটা চাপের বিষয় মনে করে সাজ্জাদ শরিফ জিজ্ঞাসা করেছেন, ছোটবেলায় এই একটা অতিরিক্ত চাপ আপনাদের ছিল?

দীপেশ বলতেছেন, “ছোটবেলায় যেটা চাপের মনে হতো, বড় হয়ে সেটা তো অর্জন মনে হয়েছে।” মানে চাপটা নেয়াতে অ-সভ্য থেকে সভ্য হতে পেরেছেন দীপেশ। মানে দীপেশও মনে করেন বাঙাল অ-সভ্য, তাকে সভ্য করতে হবে। তাকে উচ্চারণ শেখাতে হবে। বানানরীতি শেখাতে হবে। কেননা, দীপেশ তো রবীন্দ্রনাথের সাথে দ্বিমত করছেন না, বরং বাঙ্গাল হিসেবে তিনি নিজেকে অ-সভ্য মনে করে চাপটা নিয়েছেন ও সভ্য হয়ে উঠেছেন।

এরপর দীপেশ আরো বলতেছেন, “পরিষ্কার উচ্চারণে কথা বলতে হবে, উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বানানটা স্পষ্ট করতে হবে। বর্ণবিপর্যয় বা অপিনিহিতি তো আমাদের বৈশিষ্ট্য। সত্যি কথা বলতে কি, কলকাতার ভাষাটাকে ভালোবাসতে শিখলাম। এ ভাষার ওপর দেড় শ বছর ধরে কয়েক প্রজন্ম কাজ করে গেছে। তখন একটা বোধ আমার হয়েছে যে আমরা বাঙাল, তাই বলে কি আমরা ভালো করে বাংলা বলতে পারব না? ভালো বলতে কলকাতার মতো করে কথা বলা।”

হা হা হা! “ভালো বলতে কলকাতার মতো করে কথা বলা”। আমাদের কপাল ভালো যে আমরা এভাবে চিন্তা করতে শিখিনি। নয়তো বাংলাদেশের মানুষগুলোকে সবসময়ই মনে হতো এরা তো কলকাতার মতো করে কথা বলতে পারেনা, এরা তো সভ্যই হয়ে উঠেনি। আমাদের কপাল ভালো যে আমরা আমাদের সভ্য কইরা তোলার দায়িত্ব কলকাতার মতো করে কথা বলাদের হাতে ছেড়ে দেই নাই। আমাদের কপাল ভালো যে আমরা হীনমন্যতা নিয়ে বড় হই নাই।

দীপেশ চক্রবর্তী’র ইন্টারভিউ’র লিংক:
https://www.prothomalo.com/bangladesh/w9af6l9tri

শেখ সাদ্দাম হোসেন

শেখ সাদ্দাম হোসাইন। জন্ম নবাবগঞ্জ, ঢাকায়। লেখক, গল্পকার, ক্রিটিক।

  • April 3, 2023