কোক, রুচি, ইথিকস ও যাবতীয় হাউকাউ – প্রিতম ঘুম

১.
কোক স্টুডিওর গান নিয়ে যে স্পেসিফিক জায়গায় এবং ইথিক্যাল পয়েন্টে আলাপ দেওয়া হচ্ছে, সেটা প্রবলেমেটিক।
আমি বলছি না কোক ডিফেন্সে লোকজন যা বলেছে তা প্রবলেমেটিক না। ওটা কোন লজিক ই না। একটা রেটরিক্যাল আলাপ – “আগে ভালো করে জেনে আসো!”
পুরা আলাপ যে ইথিক্যাল প্ল্যাটফর্মের উপর দাঁড়ায় আছে, তা এনালজি টানলে রুচি নিয়ে স্ট্যান্ডটা কিছুটা রাইটস ইথিকস এর মতো মনে হয়। প্রত্যেক মানুষের রাইটস যেমন সমান, ঠিক তেমনি প্রত্যেক মানুষের রুচি সমান: মানে কারও রুচি ছোট-বড়, উচু-নিচু না। কারও রুচি উচু নিচু করে দেখা প্রবলেমেটিক।
সুতরাং যিনি বলছেন, “আপনারা গান বুঝেন না, বুঝে এসে গান শুনবেন।” তার কোন অধিকার নাই আপনার রুচিকে কটাক্ষ করার। আপনার যা মন চায়, তা আপনি কনজিউম করবেন। আপনার ভালো লাগলে বলবেন, যে ভালো। খারাপ লাগলে বলবেন যে খারাপ। যারা বিভিন্ন জ্ঞান নিয়ে জানাচ্ছেন আপনাদের যে আপনার গানটা বোঝার সক্ষমতা নাই, তাদের কোন অধিকার নেই কারও রুচি নিয়ে প্রশ্ন তোলার, কেননা রুচি সাবজেক্টিভ। এটা অবজেক্টিভ না। (হান্স গাডামার হয়ত জিনিসটা পড়ে কষ্ট পাবে 😪)
প্রথম প্রবলেমটা যেটা হয় তা ইথিক্যাল ইন্টারভেনশন সম্পর্কিত। মানে, “প্রত্যেক মানুষের রুচি সমান”- এটার কোন এসেনশিয়াল ইথিক্যাল প্রাগমাটিক ভ্যালু নাই, যেমন টা নাই এখনকার সময়ের এরিস্টটলের রাজতন্ত্রের ইথিকসের। যদিও তা লজিক্যালি সাউন্ড। মানে এটা বর্তমানের সংকটে, ইথিকস হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করতে হয়, তা পারে না। যেমন রাইটস ইথিকস দুর্বলকে রক্ষা করতে পারে।
অন্যদিকে “রুচি ইথিকস”এর প্র্যাগমাটিক ভ্যালু না থাকলেও, রাইটস ধারনার আছে।
ধরেন আপনার গায়ের রঙ দেখে আমি আপনাকে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করলাম, আমার কোম্পানিতে গেট কিপিং করলাম। এটা রিলেটেড টু রাইটস। ইকুয়ালিটি। আপনাকে আমি সুযোগ দিই নাই।
আবার, আপনার রুচি দেখে আমি আপনাকে সুযোগ দিলাম না জবে। এটাও রিলেটেড টু রাইটস। এটাও ইকুয়ালিটির ফ্রেম ওয়ার্কে পড়ে। কিন্তু আপনার গায়ের রঙ দেখে আপনার রুচিকে প্রাধান্য দিলাম,তাতে এটা কোন পারপাস সার্ভ করে না, এটা একটা রিডানডেন্সি, সুতরাং অক্কামস রেজার অনুসারে প্রবলেমেটিক।
প্রথম আর্গুমেন্টটা তাত্ত্বিক হাবিজাবি, কিন্তু জিনিসটা এপ্লাইড ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি করে। যদি রুচি সম্পর্কিত ইথিক্যাল আইডিয়াটা এক্সটেনশন করতে চাই, তাহলে কী ঘটতে পারে তা একটা থট এক্সপেরিমেন্ট করতে পারি আমরা।
১. কোন রুচিকে ছোট বড় ভাবা যাবে না। এবং
২. রুচি সাবজেক্টিভ।
এই অনুসিদ্ধান্ত ধরলে-
অর্থ হলো, মাসকুলিন নরম্যাটিভ গেইজে কেউ যদি কিম কারদেশিয়ানের মতো কার্ভি কিংবা ফর্সা, ইন্সটাগ্রাম বিউটি মেয়ে পছন্দ করে, ও এট্রাক্ট হয়, তা তার রুচি। এটা সাবজেক্টিভ। স্বভাবতই তা জাজ করা যাবে না। কিংবা অন্য দিকে কারও মেইল নরম্যাটিভ গেইজে কালো, নন কার্ভি, অবিস কাউকে সমুদ্র সৈকতে বিকিনি পড়া অবস্থায় দেখে যদি কেউ ক্রিঞ্জ খায়, তাহলে এটাও তার রুচি, সেটাও সাবজেক্টিভ। এবং এটা এক্সপ্রেস করার তার পূর্ন অধিকার আছে। যেহেতু রুচি সাব্জেক্টিভ। ও সকলের রুচি সমান।
কিংবা, কারও যদি বিটিএসের গান শুনে ক্রিঞ্জ লাগে, তা এক্সপ্রেস করার তার অধিকার আছে। যেহেতু সবার রুচি সমান ও সাবজেক্টিভ, তাই তার ক্রিঞ্জ খাওয়া জাজ করা প্রবলেমেটিক। আবার কারও জায়েদ খানের নাচ ও অভিনয় ভালো লাগতে পারে। এটার সমালোচনা ইজ নট ওকে। কেননা প্রত্যেক রুচি সমান।
এখন এখানে দুইটা আলাপ আসতে পারে:
১. একটা মেন্টাল হেলথ সম্পর্কিত।
না, ক্রিঞ্জ বলার অধিকার নাই, ভালো না লাগলে এড়ান। বলবেন কেন? বললে তা বুলি করা হবে, বা শেমিং হবে।
ক্রিস্টিনা আরোরা, যার কাজের উপর আফটার মিলিনিয়ালে বুলিয়িং গুরুত্ব পেয়েছে, তিনি খুব স্পেসিফিকলি বুলি ডিফাইন করেছেন। ইথিকসে এটাই ইউজ হয়। বুলি- ১. ব্যক্তি ইন্টেনশনালি করবেন। মানে সে আপনাকে লো ফিল করানোর জন্যই বলবেন।ইন্টেনশন থাকতে হবে। ২. রিকারিং হবে। রিপিটেডলি বলবেন। যেমন: স্কুলে কোন বাচ্চার পিছে পিছে একদল হাফ লেডিস, হাফ লেডিস বলছে। ৩. পাওয়ার ইম্ব্যালান্স ডাইনামিক থাকবে। ভিকটিম লো পাওয়ারের হবে।
সো, কেউ অপছন্দ করে এক্সপ্রেস করলে যদি উপরের তিনটা ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল না করে, তা এর মাঝে পরবে না। শেমিংও তাই।
আবার, ক্রিঞ্জ লাগলে যদি কেউ না বলতে পারে, তাহলে তো কোকের ক্ষেত্রেও এই আলাপ আসতে পারে। আপনাকে বলতে কে বলসে যে কোক খারাপ?
কিংবা, সাদ্দাম হোসেন ভাই যদি বলা শুরু করেন, হোয়াটস এবাউট মেন্টাল হেলথ অফ আমাদের আম্মু। উনারও কি মন খারাপ হয় না! ডিপ্রেস লাগে না!এত সমালোচনা কেন? :3
২. দ্বিতীয় আলাপ আসতে পারে মোরালিটি সম্পর্কিত। অনেক কিছুই আছে যা পছন্দ করা বা অপছন্দ করা মোরাল না। সে ক্ষেত্রে তার উচিত না এটা পছন্দ কিংবা অপছন্দ করা।
ঝামেলা হলো, আপনার পছন্দ অপছন্দ তথা রুচি ইথিকস তো নির্ধারন করে দেয় না। লেজ হিসেবে আরও আলাপ আসতে পারে- কী ইথিক্স? কার ইথিক্স? লিবারেল ইথিকস? লিবারেল ইথিকসে রুচি সমান না, হাই আর্ট লো, আর্ট আছে। এখানে মেরিটোক্রেসি আছে, যেটা এলিটিজমের পেট থেকে বের হওয়া একটা সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা।
আবার ধরেন, এনভায়রনমেন্টাল ইথিকস? এই ইথিকসে আপনি এখন ফেসবুক চালাচ্ছেন এটাও ভুল। কিন্তু তা জানার পরও, আপনার কি তাতে ফেসবুক চালানো বন্ধ হয়? অপছন্দ করা শুরু করেন?
এভিডেন্সও এমন বলে না। ধরেন, কোন একজন লোক ইসলামিক ইথিকস এ বিশ্বাস করে। কিন্তু ছোট থেকে যখন সে সিনেমার পোস্টার দেখতো, ভিউ কার্ড, কিংবা পেপারে নারী পুরুষ, সে পুরুষেই এট্রাক্ট হতো। খুবই ন্যাচারালি। তার রুচি, প্রেফারেন্স – তার বিশ্বাস ও ইথিকস অনুসারে কনট্রাডিক্ট হলেও তার এট্রাকশন কমায় নাই। ইথিকসের সিগনিফিক্যান্ট ইনফ্লুয়েন্স আপনার ডিজ্যায়ার উপর নাই সত্যিকার অর্থে।
শেষ আলাপ: লেখাটা একটু বিরক্ত হয়েই লেখা। মেইন পয়েন্ট হয়ত অনেকেই বুঝবে না। ফ্রেডারিক জেমসন প্রথম জিনিসটা লক্ষ করেন, তাকে ধন্যবাদ, তিনি জানান লেট ক্যাপিটালিজম জন মানস ও পারসেপশনে ইথিকসও চেইঞ্জ করছে। যেমন: আগে রাইটস ছিলো লিবারেল ইথিকস এ, রুচি না। কিন্তু এখন তা জনসাধারনে তা চেইঞ্জ হচ্ছে, কেননা নিউ লিবারেল ইকোনমিতে আপনার কঞ্জিউম করার অধিকার ই সবচেয়ে বড় অধিকার। পন্য কেনার স্বাধীনতা। অবশ্যই উইথ আউট গিল্ট। সো, যার যা মন চায় কঞ্জিউম করবে, এটা জাজ করা যাবে না, এটা পছন্দ/ অপছন্দ তার অধিকার।
পরামর্শ হলো, আপাতত এই ক্ষেত্রে আপনি পন্যের ক্ষেত্রে কঞ্জিউমার টাইপ রিলেশন বজায় রাখতে পারেন। মানে ভালো না লাগলে রুচি সাব্জেটিক বলে এড়ায় যান, ভালো লাগলে ফ্যানবয়িং/ফ্যানগার্লিং করেন। এটা ছাড়া আপাতত কিছু করার নাই :3
২.
কোক, রুচি, ইথিকস নিয়ে ইরনের সাথে আলাপ
[আমার আগের পোস্টে সুবিনয় মুস্তফী ইরন কিছু আর্গুমেন্ট দিয়েছে*, তার উত্তরে আমার আলাপ।]
আমার আলাপটা মানে স্ট্যাটাস ছিলো তাদের উদ্দেশ্য যারা রুচির জায়গা থেকে আর্গু করেছে। যদিও তারা নিজেরা এওয়ার ছিলো না তাদের আর্গুমেন্ট রুচির প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। আলাপের টেন্ডেন্সি মোটামুটি এই: “যেহেতু সকল রুচি সাবজেক্টিভ, সুতরাং কোন রুচিকে জাজ করা নয়। সকল রুচি সাবজেক্টিভ বলেই সমান মর্যাদা পাবে, বা সমান শ্রদ্ধা পাবে।”
তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদের বলতে চেয়েছি, আপনাদের আর্গু তে ফ্ল আছে। উদাহরন দিয়েছি যে এই টাইপ আর্গুমেন্টে কী ঝামেলা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন আমি এদের বিষয়টা নিয়েই আলাপ দিলাম? বা কেন আমি এদের এই টাইপ লজিকের ই ফ্ল আইডেন্টিফাই করলাম? আমি একে একে উত্তর দিচ্ছি।
২. তার আগে আমি জানাই, বাক স্বাধীনতার ফ্রেম ওয়ার্কে আমার কোন প্রবলেম নাই। যদিও আমি লাস্ট কয়েক বছর ধরে ইন্ডিভিজুয়ালিজম বেইসড মানে কান্টিয়ান ইথিকস অপছন্দ করছি, কেয়ার বেইসড ইথিকস আর ভার্চু ইথিক্স ভালো লাগছে। তাও, এজ আ ইথিক্যাল সিস্টেম এটা র্যাশনালি সলিড, সো বাক স্বাধীনতা নিয়ে আপত্তি নাই। মানুষের যার যেমন ইচ্ছা বলতে পারবে। কারও গান খারাপ লাগলে বলতে পারবে। ভালো লাগলেও বলতে পারবে। আবার তাদের সমালোচনা করেও নাক শিটকায়েও কেউ বলতে পারবে। সেই সমালোচনার সমালোচনা করে যদি কেউ রেটরিক দেয়, “কথা বলতে দিচ্ছে না”, যেন জোর খাটায়ে তার কথা বন্ধ রাখসে, সেটাকেও সমালোচনা করা যাবে। উত্তরে পালটা রেটরিক ও দেওয়া যাবে।
হুমকি, ধামকি, পালটা হুমকি ধামকি, আলাপ স্পন্সর, পারসুয়েশন সব ই করা যাবে। যতক্ষন না পর্যন্ত তা ভায়োলেন্সে এ গড়ায় :3
যেহেতু ইথিক্যাল সিস্টেমটা র্যাশনাল, ও এখনও প্রাগমাটিক, এজ আ ইথিক্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক, কেউ যদি এটা ব্যবহার করে, এটায় আমার কোন সমস্যা নাই। যদিও আমি ইন্ডিভিজুয়াল বেইসড ইথিকসের বিষয়ে ক্রিটিক্যাল।
৩. গানের জাজমেন্টের প্রশ্নে যারা লোকজনকে জানাচ্ছে, লোকজন ম্যাচিউরড না কিংবা মিউজিক থিউরি বুঝেন না- এটা একটা রেটরিকই। নিঃসন্দেহে এটা আমি বলেছিই আগের আলাপে। তুমিও বলেছো রুচির আলাপ এখানে রেটরিক।
তারা জানাচ্ছেন, তারা এই বিষয় নিয়ে অনেক জানে, তারা “ম্যাচিউরড”, তাদের রুচি অনেক উচ্চ। অন্যরা এই জিনিস জানে না। তাই অন্যদের জাজমেন্ট ইগনোরেবল। এ আলাপে দুইটা জিনিস আছে।
একটা হলো প্ল্যাটফর্ম। যে ফাউন্ডেশনে এই আলাপ দাঁড়ায় আছে। জাজমেন্ট অফ এস্থেটিকস। এ আলাপ বলছে, রুচির উচু নিচু আছে।
দ্বিতীয় আলাপ হলো, ক্লেইম। তারা ক্লেইম করছে রুচির উচু নিচু জায়গায় তারা উচ্চে অবস্থান করছে। যেহেতু তারা গান গায় কিংবা মিউজিক থিউরি জানে।
ইথোস তথা ক্লেইমের জায়গা এড়ানোর জন্য মেথড ইউজ করা হয়। কেউ যদি কোন কিছু দাবী করে ভালো বা মন্দ হিসেবে, তাকে মানদন্ড দেখাতে হয় স্পেসিফিক এই এই কারন গুলির জন্য ভালো। কেন এই কারন গুলিই ধরলো তার পিছনেও এভিডেন্স আর্গুমেন্ট মেথডলজি দিতে হয়।
আলবার্ট আইন্সটাইন যদি বলেন, “তোমরা সায়েন্সের কিছু বুঝো না। আমি নোবেল প্রাইজ পাইসি। আমি বলতেছি, মানুষের শরীরে কোন কোষ নাই।” এই আলাপ রেটরিক্যাল আলাপ। তারে তার আলাপ প্রমান করতে মেথড-ই ইউজ করতে হবে। তিনি কত হনু, সেটা বলে বা দাবী করে লাভ নাই।
কিংবা, যদি কেউ কোন আলাপে প্রচুর টার্ম ইউজ করে বুঝায় তিনি জ্ঞানের সাগর, কিন্তু লজিক দেয় রিটার্টের মতো। তাতেও লাভ নাই। এটাও ইথোস ইউজ করা-ই। লোগোস টা ই ইম্পর্ট্যান্ট।
যে যেই আলাপ ই দিক, তার পিছনে এনালিটিক্যাল বা কন্টিনেন্টাল কোন না কোন ট্রেডিশনের মেথড থাকতে হবে।
৪. রুচির উচু নিচু নিয়ে আলাপ দেওয়ার আগে তোমাকে একটা কেইস বলি। কেন বলছি সেটা পরে জানাচ্ছি।
বাংলাদেশীদের মধ্যে রোহিঙ্গা নিয়ে কমন অভিযোগ আছে কিছু। যেমন: তারা প্রচন্ড অপরাধ প্রবন হয়, তাদের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের কোন চেষ্টা ই নাই – একটা সময় পুরা বাংলাদেশ রোহিঙ্গায় ভরে যাবে, এত বছরেও তাদের মধ্যে একজনের নাম বলার মতো উল্লেখযোগ্য কেউ জন্মায় নাই, তারা ইয়াবা ব্যবসা করে, তারা অসৎ। ইত্যাদি। রীতিমত তোমাকে ডাটা সহ দেখাবে।
এটা রেসিজম। ডাটা না, এপ্রোচ টা।
এই একই কাজ ওয়েস্টেও করে। আমাদের সাথে। ওরা ডাটা দেখায়ে বলবে হোয়াটদের তুলনায় আমরা বেশি অপরাধ প্রবন, আমাদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী তেমন নাই, ব্রিলিয়ান্ট কেউ নাই, আমাদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা ওদের চেয়ে অনেক বেশি, একটা সময় আমাদের বাচ্চা কাচ্চা দিয়ে ওদের দেশ দখল করে ফেলবো, একটা “হোয়াইট জেনোসাইড” হবে। ডাটা অনুসারে কথাগুলো ‘সত্য”।
এর রেসপন্সে, এই ক্ষেত্রে কী লজিক হয়?
এই ক্ষেত্রে অপরাধ ধারনাটাই কি বাতিল? বা জনসংখ্যা বলতে কিছু আছে এই ধারনাটা? এই লজিক কি দিবো যে অপরাধ বলতে কিছু নাই! জনসংখ্যা বলতে কিছু নাই বা ব্রিলিয়ান্সি বলতে কিছু নাই?! :v
বরং এর রেসপন্সে হিস্ট্রিক্যাল অপ্রেশনের কথা বলা যায়। কোন গোষ্ঠি যদি পিছিয়ে পরা হয়, সমান সুযোগ না পায়, তার মধ্যে যদি সম্পদ সীমিত হয়, তাহলে তার মধ্যে অপরাধ প্রবনতা সহ বিভিন্ন কিছু থাকবেই। তার বিকাশ ও হবে না।
এটা সত্য কিন্তু অমুক অমুক ফ্যাক্টরের জন্য তা হয়েছে। অমুক অমুক জিনিস সরালে এইটা থাকবে না। দুনিয়া “রাইট” হবে। জেন্ডার, রেইস, কালচার সব ক্ষেত্রে কারন অনুসন্ধান করা হয়, সেটাকে “কারেক্ট” করার জন্য।
(যদি কান্টিয়ান এস্থেটিকস অনুসারে ধরে নিই রুচির উচু নিচু আছে), রুচির উচু নিচু প্রশ্নে নিউ লিবারেল রা তার রুচির কারন অনুসন্ধান করে না। সে বলে না যে এই এই কারনে সে অমুক তমুক শোনার বা দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। বরং, অত্যন্ত উইয়ার্ডলি, তা বাতিল করতে চায় :3 সে জানায় এটা সাবজেক্টিভ। তার টেস্ট ও লেস্টার ব্যাংস এর মিউজিক টেস্ট উভয়েই সাবজেক্টিভ :3
অথচ, তার লাইফ ভীষন মেসি হতে পারে, তার জীবনে মহা সংকট থাকতে পারে, তার অবসর কম থাকতে পারে – যেহেতু বিনোদনের সাথে অবসরের বিশাল সম্পর্ক। আবার তার মেন্টাল হেলথ প্রবলেম থাকতে পারে, হয়ত বিঞ্জ ওয়াচ করা তার একটা এসকেইপ রুট, সে জন্য সে ভালো কিছু পড়তে/ শুনতে/ দেখতে পারে না। তার ডিপ্রেশন থাকতে পারে। সে বাংলাদেশের ফ্যামিলির মা গোত্রীয় কেউ হতে পারে, হয়ত তার রুটিন খুব টায়ার্ড হওয়ার মতো। ঘুম ই সবচেয়ে বড় বিনোদন তার।
সত্যিকার অর্থে, পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষে এক বা দুই সর্বোচ্চ তিন বিষয়ের বেশি বিষয়ে স্পেশালিস্ট হওয়া সম্ভব না। কোন মানুষের পক্ষে এক সাথে অনেক বিষয়ে বিশিষ্ট রুচির হওয়া সম্ভব না। যে গানে ভালো সে হয়ত সাহিত্যে না,এবং এমন হওয়াই স্বাভাবিক। প্রতি বছর যদি কেউ ৮০ টা বই পড়ে, ৮০ বছরের জীবনে সে বই পড়তে পারবে সর্বোচ্চ মাত্র সাড়ে ৬ হাজার বই। এটা কোয়ান্টিটি।
আর, কেউ যদি পড়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কোয়ালিটি নির্ধারন করতে চায়? নিৎশে, বার্গসন, প্রুস্ত সহ অনেকেই আছে যাদের বই হুমায়ুনের উপন্যাসের মতো পড়া সম্ভব না। যদি কেউ ১ মাসে ১ টা করে বই পড়ে, তাহলে ৮০ বছরের জীবনে কেউ কোয়ালিটি বই পড়তে পারবে, ৮০x১২= মাত্র ৯৬০ টা। যদিও লোকজন কোয়ালিটি বই পড়া শুরু করে ১৬/১৭র পর। তাও ধরলাম এটা।
এটা জানায় জীবন ছোট, এটা এও জানায় কারও পক্ষেই সব বিষয়ে বিশাল রুচিশীল হওয়া সম্ভব না। কোন না কোন ক্ষেত্রে আপনার রুচি ভালো, কোন না কোন ক্ষেত্রে আপনার রুচি সাধারন। আর, স্বভাবতই আপনি কোথাও সাধারন ও ভালো হওয়ায়- অন্যের সাথে এম্প্যাথাইজ করতে পারার কথা, যদিও এই বঙ্গভূমিতে এটা হয় না।
এটা এও জানায় কেউ যদি আসলেই ভাবে, জীবন একটাই এবং এ জীবনের সৌন্দর্যকে এক্সপ্লোর করা দরকার, তবে তাকে বই,গান, আর্ট সহ সব বিষয়ে ভীষন চুজি হতে হবে।
কিন্তু নিউ লিবারেলরা কেন রুচিকে সাবজেক্টিভ রাখতে চায়?
৫. প্রথমত লেট ক্যাপিটালিজমের সময় এটা প্রোমোটেড হয়েছে। কর্পোরেট ই করেছে। এজন্যই ফ্রেডারিক জেমসনের আলাপ তুলেছিলাম।
কোক স্টুডিওর মতো কর্পোরেট যে এটিচিউট ও ভ্যালুজ প্রমোট করেছে, তা শিখে বহু বছর পর সে একই ভ্যালুক দিয়ে কর্পোরেটের বিরোধীতা করছে! কিন্তু এতে আগায় যাওয়া যায় কী? কত টুকু ই বা যায়?
আবার ইন্ডিভিজুয়াল লেভেলেও আলাপ দেওয়া যায়।
যদি কান্টিয়ান এস্থেটিকের জায়গা ধরি, এখানে দুইটা জিনিস আছে। একটা হলো, আমার এস্থেটিক এক্সপেরিয়েন্স এর প্রকৃতি। আমি কিভাবে বুঝবো আমার এস্থেটিক এক্সপেরিয়েন্স অন্যদের মতই অথবা তার থেকে ভিন্ন না? কিংবা আমি কিভাবে বুঝবো আমার এস্থেটিক এক্সপেরিয়েন্স পিওর?
আমার এস্থেটিক এক্সপেরিইয়েন্স ই যে মান্যতা পাবে তারই বা কী নিশ্চয়তা? যারা জার্মান আইডিয়ালিজমের সাথে পরিচিত তারা হয়ত বুঝতে পারছেন, আলাপ কোন দিকে যাচ্ছে।
কান্ট বলছেন ইউনিভার্সাল ভ্যালিডিটির কথা, কান্ট একটা বিশেষ ধরনের এক্সপেরিয়েন্সের কথা বলছেন,যা ইম্পিরিকাল হবে না। আমি এই আলাপ বাড়াবো না। আলাপ ডিসট্রাকটেড হবে। হয়ত নেক্সট কোথাও সামনা সামনি আলাপ হবে।
আমি বরং একটা উদাহরন দিই। ধরা যাক একজন লোক খারাপ মুডে একটা জিনিস পড়লো, তাহলে তার মুডের প্রভাব তার এস্থেটিক টেস্টে পড়বে কিনা। কিংবা কেউ ভালো মুডে পড়লো? কিংবা কেউ এমন জিনিস পড়লো যা তার ছোট বেলায় হয়েছে? তার অনেক ভালো লাগলো, কিংবা এমন জিনিস দেখলো বা পড়লো যা তার ভ্যালুজ এর সাথে যায় না, তখন?
কান্টের এস্থেটিকস এর এই আলাপ বোঝা দরকার, কারন আর্ট এর মেথডলজি গড়েই উঠেছে জাজমেন্টের ক্ষেত্রে এই ভ্যারিয়াবল গুলো কিভাবে মিনিমাইজ করা যায় তার ভিত্তিতে।
নিও লিবারেল ব্যক্তি যেহেতু ক্যান্সেল কালচারের ধারক ও বাহক, সে কালচারলি সবাইকে জাজ করতে চায়, কিন্তু নিজে জাজড হতে চায় না।
এই যে তার ডাবল আচরন, নিজেকে রক্ষা করা ক্যান্সেল বা ট্যাগ খাওয়া থেকে, আবার আইরনিক্যালি, সেখানেই আবার সে নিজেই শিকারী। এটা একই সাথে কমিক্যাল আবার একই সাথে মন খারাপ করার মতো টায়ারিং এলিয়েনেটেড একটা বিষয়। রুচিকে সাবজেক্টিভ ঘোষনা করার কারন এটাই, নিও লিবারেলদের জাজড হতে হয় না।
৬. এবার আমার সর্বশেষ ও সবচেয়ে জরুরী আলাপে আসি। কেন নিউ লিবারেল মোরাল নিয়েই আমি আলাপ দিলাম, তাতে যাই।
কোক স্টুডিওর যে গান, এখানে গানের অনুষ্ঠানের কারন কী?
তোমার আমার কনভারসেশন অন্যরাও পড়ছে, তাদের বলছি- আপনাদের কি মনে হয় একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান আপনার দেশের গান উন্নয়নে খুব চিন্তিত! সিরিয়াসলি?!
বড় কোম্পানীগুলোকে মডার্ন রাস্ট্র সাধারনত কিছু শর্ত দেয় ট্যাক্স নিয়ে। যেমন যদি তারা অমুক পরিমান টাকা জনস্বার্থে ব্যয় করে, তাহলে তাদের ট্যাক্স কম দিতে হবে, বা দিতে হবে না। বিল এন্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কথা বলা যায় উদাহরন হিসেবে। তারা হেলথ, এডুকেশন ব্যয় করে। এতে গেটস এর নাম ও হয়, ট্যাক্স ও কমে।
তবে, বাংলাদেশে একটা মজার ঘটনা হয়। এখানে এই টাকাটা খরচ হয় বিনোদন মাধ্যমে। অমুক ফোন কোম্পানী প্রযোজিত তমুক নাটক, বা তমুক দাঁত মাজার পেস্ট প্রযোজিত তমুক গানের অনুষ্ঠান।
কিন্তু কেন? এটা যেহেতু বাংলাদেশ, তাই অতি অবশ্যই এখানে কিছু জাদুমন্তর আছে। যেমন ট্যাক্স ফাঁকির জন্য নাটক সিনেমার “মানউন্নয়নের” লক্ষে গঠিত প্রজেক্টে অনেক টাকা খরচ দেখিয়ে, নাটক এ অল্প টাকা খরচ করা হয়। প্রশ্ন হলো, বাইরে হেলথ, এডুকেশন সহ বিভিন্ন সেক্টরে এই টাকা খরচ হয়। কিন্তু এখানে কেবল বিনোদনে কেন?
কেননা বিনোদন অনুষ্ঠান করলে আসলে ফ্রি মার্কেটিং হয়ে যায়। মানে আমি ট্যাক্স ও ফাঁকি দিবো, টাকাও প্রজেক্টে ফাঁকি দিবো, আবার আমার লোগো ইউজ করে মার্কেটিং ও করবো।
তো, এই যে কোক স্টুডিওর গান, এটা তো একটা মার্কেটিং ই। এখানে আমাদের বিশিষ্ট সচেতন প্রোগ্রেসিভ লোকদের ভূমিকা কী? তারা ব্যাপক গালিগালাজ করে কোক পানীয়টার মার্কেটিং করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। আমার পরিচিত আত্মীয় কোক স্টুডিও নিয়ে গান কৌতুহলে দেখেছে, কেননা তার ভাতিজি এ নিয়ে তীব্র স্ট্যাটাস দিয়েছে :3 মানে কোক স্টুডিও যে উদ্দেশ্য কাজ টা করেছে, তা পুরন করে দিচ্ছে তারা।
এবং আরও ইন্টারেস্টিংলি ও বড় বিষয়- তারা কিন্তু অনুষ্ঠান বর্জন করে নি। তারা বার্টলবি স্টাইলে বলে নাই যে, “আই প্রেফার নট টু।” বরং তাদের মুল আলাপ কিন্তু কোকের অমুক গান ভালো, তমুক গান ভাল্লাগেনাই, তমুক গান মুলত আগ্রাসন হয়েছে এসব। অমুক গানে গাছ লতা পাতার প্রান নাই, তমুক গানে গ্রাম নাই – এসব হাবিজাবি।
এর অর্থ হলো, তাদের অমুক, সমুক ও তমুক ক্রাইটেরিয়াগুলো পুরন হলে তারা এই অনুষ্ঠানটা গ্রহন করবে। মানে এখানে যে আগ্রাসন বিরোধীতা, তা উপরে ইথিক্যাল শোনালেও, সেটার কাজে কর্মে রিফ্লেকশন পাওয়া যাচ্ছে না।
(আমি এজন্যই আলাপের সময়ে কোকের কোন গান নিয়ে কথা বলায় এঙ্গেজ করি নাই।)
সত্যিকার অর্থে, প্রত্যেক গান নিয়ে এই সকল সমালোচনাগুলো মুলত ফর্মগত ভাবে একরকমের পরোক্ষ পরামর্শ দান। যেন একটা এক্সপেক্টেশন আছে- কোক সটুডিও অমুক ভাবে কাজটা করলে কাজ টা “মোরাল” হতো। “নন জাজমেন্টালি” কনজিউম করা যেত গানটা । এখন এভাবে কাজটা করে তারা “ঠিক” হয় নাই।
উদাহরন হিসেবে প্রথম আলোর কলামে সোহরাব বা আনিসুল হকের সমালোচনার কথা বলা যায়। আওয়ামীলীগের কাজে তারা পদে পদে ব্যথিত হন! চমকে উঠেন! কিভাবে পারলো ওরা কাজটা করতে, এই কি ছিলো ৭২র এর আওয়ামীলীগ!🥺 এসব বলে তাদের যে মিষ্টিমধুর সমালোচনা ও থরথর শক্ত উত্থিত নিন্দা, তা আসলে এক রকমের পরোক্ষ পরামর্শ।
দ্বিতীয়ত আরেকটা আলাপ দেওয়া যায়, কান্টের বায়াস নিয়েই। আমি এখানে আর্গুমেন্ট দিবো না। যাস্ট প্রশ্ন। যদি এই সেইম গান গুলো ই অন্য ব্যানারে হতো, একদম পাড়া গাঁয়ে, কিংবা, পোভার্টি পর্নে ভরপুর গরীব+ ছেড়া ড্রেস, কিন্তু সুন্দর, চামড়ায় দাগহীন, এডোরেবল পরিষ্কার বাচ্চার কন্ঠে, এই সেইম বনবিবি নিয়ে গান?
তাহলে কি তাদের এস্থেটিক জাজমেন্টে ভিন্নতা আসতো? অধিকাংশের? এই প্রশ্ন করলাম পরের পয়েন্টের জন্য।
৭. কোক স্টুডিও নিয়ে যারা কোকের গান বিরোধীতা করছে,ও সমালোচনা করেছে এবং
কোকের গান এজ আ প্রতিষ্ঠান- এই দুইটাকে সম্ভবত তুমি এক্সক্লুসিভ ধরছো। কিন্তু, এরা আলাদা না।
আসলে সবার ভ্যালুজ একই ।এদের একই বিয়িং অফ ইটসসেলফ :3 এরা একই ইকোসিস্টেমে বিলং করে। এদের একই নিউ লিবারেল মোরাল কারেন্সি।
এদের সমালোচনার স্টাইল তা প্রমান দেয়। উপরেই বলেছি। আরও দুঃখজনক হলো, সে অল্টারনেটিভ কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না এটা সমাধানে। ভোক্তাকে সে চয়েজ দিচ্ছে না কোন। কোন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম বানানো, কোন অল্টারনেটিভ সিস্টেম যেখানে সে যা দাবী করছে, বা চাচ্ছে, তা প্রোমোটেড হবে এমন কিছুর কথা বলছি।
মানে দোকানে বিভিন্ন খাবার থাকার পরও যদি কেউ কোক খায়, তাহলে আমি ক্লিয়ারলি বলতে পারবো অমুক অমুক অপশন থাকার পর ও আপনি কোক খাচ্ছেন। আপনি হেলথ সচেতন না। কিন্তু দোকানে খাবারই আছে কোক, আর কিচ্ছু নাই। লোকজন কোক খাওয়ার সাথে সাথে আমি বলছি – কোকে অমুক নাই তমুক নাই। আপনি হেলথ সচেতন না। মানে আমি সমালোচনায় আছি (যেহেতু এটা ইজি পার্ট) কিন্তু উদ্যোগে নাই। এই আচরন আমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবো? ইথিক্যালি রেলিভেন্ট ছাড়া তো আর কিছু মনে হয় না এর কারন!
আমি তাই কটাক্ষ করে এই গ্রুপকে জানাচ্ছিলাম, এভাবে বিরোধীতা করা প্রবলেমেটিক। কারন ভাল্যুজ তো একই। একই ভ্যালুজ নিয়ে সেইম ভ্যালুজের বিরুদ্ধে ফাইটে আগাবে কিভাবে?
…
*এই ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে পাবেন:
Leave a Reply