
যে কোন আলাপে প্রিমাইজটা ইম্পর্টেন্ট, যে কোন বেইজগুলার উপরে দাঁড়ায়া আপনি কথাগুলা বলতেছেন। অই প্রিমাইজগুলা বদলাইলে আলাপের ধরণও বদলায়া যাবে। প্রিমাইজগুলা স্ট্যাটিক না, বদলাইতেই পারে, কিন্তু অইগুলা ঠিক না কইরা নিলে কোন আলাপ করাটাও মুশকিল। তো, মোটাদাগে, আমার আলাপের প্রিমাইজগুলা হইতেছে এই ৫টা:
১. বাংলাদেশে বই পড়ে স্টুডেন্টরাই। এই গ্রুপটাই সবচে বড় কাস্টমার। বইয়ের বাজারের একটা বড় অংশও হইতেছে টেক্সট বুক। ভার্সিটির না, বরং স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার বই।
২. বাংলাদেশে এই টেক্সট-বইয়ের বিজনেসটা করে গর্ভমেন্ট। এখন যে কোন বিজনেস যদি গর্ভমেন্ট করে, সেইটা খারাপ-বিজনেস হইতে বাধ্য। খালি প্রফিটেবিলিটির জায়গা থিকাই না, প্রডাক্টিভিটি, বিজনেস অপারেশনসের জায়গা থিকাও এইটা বাজে এবং দুর্নীতিরও বড় একটা ঘটনা। আর এইটা পলিটকাল কন্ট্রোলের টুল তো অবশ্যই। এই টেক্সট-বুক বিজনেসের ভিতর দিয়াই গর্ভমেন্ট বাংলাদেশের বইয়ের মার্কেটরে কন্ট্রোলের মধ্যে রাখে।
৩. এর বাইরে গল্প-কবিতা-উপন্যাস-ননফিকশনের বই চলে না – ব্যাপারটা এইরকম না। কিন্তু এই ধরণের বইগুলা দরকারি-জিনিস হয়া উঠতে পারে নাই। এমনকি ফ্যাশন হিসাবেও বাংলা-কবিতা বা ফিকশন পড়াটা স্মার্ট কোন ঘটনা না। ইংলিশ-বই ব্যাপারটাই স্মার্ট এবং কম-বেশি দরকারি ঘটনাও। মানে, এমন কোন বাংলাদেশি রাইটারের বই নাই, যেইটা না পড়লে অনেককিছু আপনি মিস কইরা যাবেন। বা কোন বাংলাদেশি রাইটারের বই নাই যেইটা বাংল-ভাষার কমিউনিটির বাইরে ইন্টারন্যাশনাল কোন ইন্টারেস্টের ঘটনা হয়া উঠতে পারতেছে। বাংলাদেশে গল্প-উপন্যাস-কবিতার যেই নিশ-মার্কেটটা আছে, অইখানেও ইন্ডিয়ান-বইই ডমিনেন্ট। নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতেও ইন্ডিয়ান-বাংলা বই যেহেতু প্রাচ্যবিদ্যা বা ইন্ডিয়ান-কালচারের লগে কানেক্টেড, প্রডাক্ট ক্যাটাগরি এবং রিচনেসের জায়গা থিকা বাংলাদেশের বাংলা-বই খালি কমই না, মোটামুটি নাই-ই আসলে।
৪. আর এইটা খালি সাহিত্য-ধারণার এবং কনটেন্টের রিচনেসের ঘটনাই না, ভাষার প্রাকটিসের লগে রিলেটেড একটা ফেনোমেনা-ই। বাংলা-ভাষা লিখিত হওয়া শুরু করছে কলোনিয়াল পিরিয়ড থিকা, অই সময়ে কলকাতায় যেই সাহিত্য-ভাষা তৈরি হইছে অইটাই এখনো পর্যন্ত “বাংলা-ভাষা”। অইটা কম-বেশি চেইঞ্জ হইলেও এর বাইরে গিয়া নতুন সাহিত্য-ভাষা তৈরি হইতে পারে নাই এখনো। অই প্রাকটিস ও ধারণাটা খালি একটা অভ্যাসের জিনিস না, কনশাস বোঝা-পড়ারও ঘটনা, যেইটা সরতে টাইম লাগার কথা। মানে, বাংলা-ভাষা এবং বাংলাদেশের রিডার – এই জায়গাটাতে একটা ডিসকানেকশন আছে। যেইটার কারণে কনটেন্টের জায়গাটাও সাফার করার কথা।
৫. আরেকটা ঘটনা হইতেছে বাংলা-বইয়ের বাজার বাংলাদেশের বাইরে নাই-না, অইটা প্রডাক্ট হিসাবে অই লেভেলে এক্সিলারেটেড হইতে পারে না, যেইখানে ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন পসিবল হইতে পারে। কনটেন্টের বাইরেও ফিনান্সিয়াল লেনদেনের প্রবলেম এইখানে আছে, যার জন্য ই-বুক এবং অডিও-বুক বিজনেস মিনিমাম কোন জায়গাতে রিচ করতে পারে নাই।
যদিও এই প্রিমাইজগুলা আরো ব্যাখ্যা করা যায় এবং নতুন কিছু অ্যাড করা যায়, কিন্তু আপাতত, এইটুক রিলিভেন্ট পয়েন্ট হিসাবে থাকতে পারে। আর চিন্তার জায়গাতে চাইলে এন্ডলেসলি যেমন সামনের দিকে যাইতে পারি আমরা, পিছনের দিকেও যাইতে পারি তো। এই কারণে মিনিমাম এই কয়েকটা পয়েন্টরে ধরে নিতেছি।
এই প্রিমাইজগুলার লগে কয়েকটা প্রেজেন্ট কন্ডিশন বা অবজারভেশনও অ্যাড করতে চাই আমি। যেই অবজারভেশনের বেসিসে কয়েকটা ডিসিশানের কথা আমি বলতে চাই। বাংলাদেশের বইয়ের বাজার নিয়া আমার অবজারভেশন মোটাদাগে ছয়টা –
১. বুক পাবলিকেশন এবং বই-ছাপায়া দেয়ার বিজনেস যে একই ঘটনা না – এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা এখনো ক্লিয়ার না। এখনো পর্যন্ত বই ছাপানোটারেই “পুস্তক প্রকাশনা” বিজনেস বইলা ধইরা নেয়া হয়। কেউ একজন একটা বই লিখলো আপনি সেইটা ছাপায়া দিলেন – এইটাই হইতেছে পাবলিশারের কাজ। এইটা সরকারি-বই ছাপানো জায়গা থিকা আসছে বইলাই আমার ধারণা। বাংলাদেশে “সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশনা” অইটারই একটা বাই-প্রডাক্ট, যার ভিতর দিয়া পাবলিশার হিসাবে নিজেদেরকে ক্লেইম করা যায়, সরকারি অফিসে বই সাপ্লাই দেয়া যায় এবং সরকারি-ছাপার কাজ পাইতে সুবিধা হয়। এমনকি বই ডিস্ট্রিবিউশন করাও পাবলিশারের কাজ না!
২. বাংলাদেশে বুক ডিস্ট্রিবিউশন কোন সিস্টেম নাই। হাইস্কুল, মাদরাসা এবং কলেজ লেভেলের নোটবই এবং বিসিএস পরীক্ষার জন্য কারেন্ট এফেয়ারস বই-ই মোটামুটি জেলা-উপজেলা শহরগুলাতে পাওয়া যায়। এর বাইরে বই বেচাকেনার মেইন জায়গা হইতেছে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় বাংলা একাডেমির বইমেলা। তা নাইলে ঢাকায় দুই-চাইরটা বইয়ের দোকান এবং অনলাইনে রকমারি-তে বই বেচা।
৩. বাংলাদেশে নানান পদের বইয়ের কোন ডিমান্ড নাই বা রিডার নাই, নাকি বই-ই নাই – এই নিয়া কিছু তর্ক থাকলেও, এইটা ‘ডিম আগে না মুর্গি আগে’র ঘটনা না এতোটা। বরং বই জিনিসটারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিডের লগে রিলিভেন্ট কইরা তোলা যায় নাই।
৪. আর এরজন্য রাইটারদের রয়ালিটির বেবস্তা করলেই সমস্যার সমাধান হয়া যাবে না আর কি! 🙂 বা রাইটারদেরকে বাজারি-বই লেইখা “স্বাবলম্বী” হইতে হবে – এইরকমও না। একজন রাইটার একইসাথে ভালো-রাইটার এবং পপুলার-রাইটার হইতে পারেন, কিন্তু ক্যাটাগরি হিসাবে দুইটা আলাদা ঘটনাই। একজন ভালো-রাইটার বা ভালো-বই অবশ্যই একটা ঘটনা। সৈয়দ মুজতবা আলী বা বিষাদ-সিন্ধু এখনো বাংলাদেশের বেশি-বেচা বইগুলার লিস্টে থাকার কথা।
৫. কিন্তু এইটা একজন সেলিব্রেটি রাইটার আবিষ্কার করতে না-পারার রেজাল্ট না, বরং একটা একো-সিস্টেম তৈরি না-করতে পারার ফেইলওর। খালি ইকনোমিকালি না, পলিটিকাল জায়গা থিকাও। যেইটা বাংলাদেশে তৈরি করার কোন ইনিশিয়েটিভও নেয়া হয় নাই। এবং অই জায়গাগুলাতেও কথা-বলার ও নজর দেয়ার নজিরও নাই তেমন।
৬. তো, ঘটনা এইটুকই না যে, সমস্যাগুলারে আইডেন্টিফাই করা হইতেছে না এবং সমাধানের কোন চেষ্টা করা হইতেছে না; বরং এইটা এগজিস্টিং পলিটিকাল জুলুম, কালচারাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং ইকোনমিক প্রসেসের লগে ক্লোজলি ইন্ট্রিগ্রেটেড ঘটনা। টেক্সট-বই মানে বাচ্চাদেরকে “শিক্ষিত” কইরা তোলা-ই না, পলিটিকাল কন্ট্রোলের সবচে সিগনিফিকেন্ট টুলও। “শিক্ষিত” হওয়াটাও খালি সার্টেন নলেজের ঘটনা না, একটা কালচারাল এলাইনমেন্ট এবং এটিটিউট গেইন করার জিনিসও। আর এর ইকনোমিক প্রসেসটা এক্টিভ থাকতেছে পলিটিকাল ও কালচারাল ডমিনেন্সটারে সার্ভ করার ভিতর দিয়া। মানে, বই জিনিটারে আলাদা একটা আইটেম হিসাবে দেখা যাবে-না না, বরং এইভাবে দেইখা খুব বেশি দূর পর্যন্ত আগানো যাবে না, বাকি জিনিসগুলারে বাদ দিয়া।
তো, এই প্রিমাইজগুলা এবং অবজারভেশনগুলার বেসিসে আমার সাজেশন হইতেছে চাইরটা –
১. টেক্সটবুক তৈরি করা, ছাপানো এবং ডিস্ট্রিবিউট করার বিজনেস গর্ভমেন্টের কাছ থিকা সরাইতে হবে। এইটা মোস্টলি পলিটিকাল ডিসশানের একটা ঘটনা।
গর্ভমেন্টের শিক্ষা-অফিস একটা গাইড-লাইন তৈরি কইরা দিতে পারে বড়জোর, যে এই এই সাবজেক্ট পড়াইতে হবে, এই এই এরিয়া কাভার করতে হবে। বই তৈরি করবেন প্রাইমারি-স্কুলের, হাই-স্কুলের, কলেজ এবং মাদরাসার টিচার’রা, এক্সপার্ট এডিটর, রাইটারদেরকে নিয়া। পাবলিশারের কাজ হবে অই বইগুলা তৈরি করা এবং ছাপানো। ন্যাশনাল কারিকুলাম এন্ড টেক্সটবুক বোর্ড (এনসিটিবি) বড়জোর রিকমেন্ড করতে পারে, সাজেস্ট করতে পারে, কোন বইগুলা বেটার। এর বাইরেও রেফারেন্স বই থাকতে পারে। এর ফলে বইয়ের মার্কেট’টা এটলিস্ট ওপেন হইতে পারবে। কনটেন্টের ডাইবারসিটি বাড়বে, কম্পিটিশন তৈরি হইতে পারবে।
লিনিয়ারিটি থাকবে না – এই ডর দেখায়া কন্ট্রোলের জায়গাটারে এটলিস্ট “প্রশ্নহীন” রাখা যাবে না। টোটাল প্রসেসটা তৈরি করতে গেলে অবশ্যই আরো ডিটেইল কাজ করতে হবে, কিন্তু এই রাস্তা ধইরা হাঁটতে পারাটাই বেটার মনেহয়।
আর এইখানে গর্ভমেন্ট অবশ্যই সাবসিডি দিবে। কনটেন্ট ও কোয়ালিটি অনুযায়ী প্রাইস রেইঞ্জ সাজেস্ট করতে পারে। স্কুল-কলেজগুলাতে বই কেনার বাজেট দিবে। চুরি-চামারি এতে কমবে না, কিন্তু ডিসেন্ট্রালাইজড হইতে পারবে। এনসিটিবি, স্কুল-কমিটি, টিচার – সবাইরেই এই টাকার ভাগ দিতে হবে। মানে, যত বেশি মানুশ একটা ডিসিশান-মেকিং প্রসেসে অ্যাড হবে, চুরি করাটা তত বেশি কম-লাভের জিনিস হইতে পারার কথা।
ফাঁকে একটা কথা বলি, ইসলামি-বইয়ের যে বিশাল একটা বাজার আছে বাংলাদেশে, অইটা সরকারি-নজরদারি নাই বা কম আছে বইলাই আছে, কিছুটা ফ্লারিশড হইতে পারতেছে। এখন এই বুদ্ধি আমি গর্ভমেন্টরে দিতেছি না যে, অইখানে কন্ট্রোল করা লাগবে, বরং এই চেষ্টা তো অন-গোয়িং আছেই নানানভাবে। এখনো পুরাপুরি কব্জা করতে পারে নাই আর কি! যেইভাবে বাংলা-মিডিয়ামে আছে। আর এই কারণে বাংলা-মিডিয়ামের টেক্সট-বুক বাতিল জিনিস হইতে পারতেছে। কনটেন্টের কারণে না, বরং কন্ট্রোলের কারণে। এইখানে পুরা একটা আলাপ তো আছেই।
২. আরেকটা জিনিস ভাবতে পারার দরকার আছে যে, বই অ্যাজ অ্যা প্রডাক্ট কোনদিনই ধ্বংস হয়া যাবে না, বা বাতিলও হবে না। টেকনোলজিকাল চেইঞ্জের কারণে রি-শেইপডই হওয়ার কথা।
অন্য যে কোন মিডিয়ামের মতোই বইও চেইঞ্জ হইতে থাকবে। ইবুক অলরেডি আসছে, অডিও-বুক তো পপুলার হওয়ার পসিবিলিটির মধ্যে আছে। মানে, খালি বই-ছাপানোটা আর “বই” হয়া থাকবে না, বরং কোন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনাগুলারে গুছায়া একটা জায়গাতে রাখার ঘটনাটা আরো এক্সক্লুসিভ, জরুরি এবং রিলিভেন্ট হয়া উঠতে থাকবে। বইরে রিলিভেন্ট রাখার জন্য টেকনিকাল ইনোভেশনগুলা বরং দরকারি।
বইয়ের ক্যাটাগরি যেমন খালি টেক্সট-বুক না, গল্প-উপন্যাস-কবিতাও বই না, নানান ক্যাটগরির বইয়ের নিড আছে, দরকার আছে।
সঠিক উপায়ে হাঁস-মুর্গি পালন থিকা শুরু কইরা কোডিংয়ের বই পর্যন্ত, এবং এর বাইরেও বইয়ের স্পেইস আছে। গুগুল সার্চ, ইউটিউব ভিডিও, উইকিপিডিয়া, চ্যাটজিপিটি অবশ্যই এই জায়গাগুলার শেয়ার নিবে। কিন্তু ওয়েল-রিটেন বইয়ের বিকল্প হয়া উঠবে – এই নিশানা এখনো পর্যন্ত দেখি না আমি। সো, খালি অথেনটিক সোর্স হিসাবে বই-ই খুঁজবে মানুশ – তা না, বরং বইয়ের অই ইউলিটি’টা এখনো আছে। কিন্তু অই জায়গাগুলাতে বই দিয়া কানেক্ট করার উপায় বাইর করতে না পারলে নিডটারে রিকগনাইজই করতে পারার কথা না আমাদের।
৩. বই ছাপানো হয় বইলা বই কিনতে হবে বা পড়তে হবে না, বরং বই যে সার্টেন নিডগুলা ফুলফিল করতে পারে তার জন্য বইয়ের ভিজিবিলিটি, বই-রিলেটেড ইন্সিটিটিউশন বাড়াইতে হবে। একটা ডিস্ট্রিবিউশন-স্ট্রাকচার ডেভোলাপ করতে হবে যেইটা পলিটিকাল সার্পোট, কালচারাল প্রাকটিসের ভিতর দিয়া ইকনোমিকালি ভায়াবল হইতে পারবে।
যেমন, প্রতিটা শপিংমলে একটা বইয়ের দোকান থাকতে হবে, প্রতিটা সুপার স্টোরে একটা বুক কর্নার – এইরকম কন্ডিশন থাকতে পারে, প্রতিটা রেলস্টেশনে যেমন ছিল (বা আছে)। নতুন রেসিডেনশিয়াল এরিয়ার প্ল্যান বুকস্টোর, পাঠাগার থাকতে পারে। কিন্তু তাই বইলা সেইটা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের (বিসাকের) মতো একটা বুক-ফেটিশ অবসেশন তৈরি করার ঘটনা হইলে কোন কাজের জিনিস হবে না আসলে, হবে কন্ডিশন-ফুলফিল করা, জোর কইরা জায়গা-দখলের ঘটনা। কিন্তু এইটা ন্যাচারাল প্রসেসের ভিতর দিয়া হওয়ার চাইতে একটা সেন্সেটিভ ও দরকারি ক্যাটাগরি হিসাবে এক ধরণের সার্পোট-সিস্টেমের ভিতর দিয়াই হইতে হবে।
এইগুলা বইয়ের বিজনেসের টেকনিকাল আসপেক্টই। কালচারাল প্রডাক্ট হিসাবে মার্কেটে এস্টাবলিশড হইতে হইলে বইরে তার যেই সিগনিফিকেন্স সেইটা ডেলিভার করতে হবে সবচে আগে।
৪. বই যতটা না এন্টারটেইনমেন্ট ম্যাটেরিয়াল তার চাইতে বেশি হইতেছে চিন্তা ও ক্রিয়েটিভিটির কনটেন্ট। এই বেসিক নিডের জায়গাটা যদি বই ফুলফিল না করতে পারে, তাইলে সেইটা বাজার-দখল করতে পারবে-না না, অইটা ক্যাটাগরিকালি বই-ই হয়া উঠতে পারবে না। কোন বই কোন রিডার-গ্রুপের কোন নিডটারে কিভাবে ফুলফিল করতেছে – সেইটাই হইতেছে বইয়ের বাজারের জন্য ক্রুশিয়াল ঘটনা।
বাংলা-ভাষায় এইরকম দরকারি বইয়ের সংখ্যা খালি কম-ই না, বরং এইরকম জায়গাগুলা থিকা দেখার, বিচার করার বা আইন্ডেটিফাই করার কোশিশগুলাি মিসিং। অন্য ভাষার অন্য চিন্তাগুলারে বাংলা-ভাষার রিডারদের জন্য মেইড-ইজি হিসাবে পেশ করাটা বইরে ইন্টেলেকচুয়াল প্রডাক্ট হিসাবে টিইকা থাকতে হেল্প করবে না, বরং যারা বই পড়তে শিখবে, বুঝতে পারবে যে, শুধুমাত্র বাংলা-ভাষার বই পইড়া কিছু শেখা যাবে না! 🙁 এমনকি বাংলাদেশি-নলেজের জায়গাগুলাও ইংরেজি বই পইড়াই শেখা লাগবে!
বাংলাদেশের বই যদি এই নিডের জায়গাগুলারে টাচ না করতে পারে, তাইলে টেকনিকাল ইম্প্রুভমেন্ট এবং মার্কেট স্ট্রাডেজি কোন কাজে লাগবে না। বরং এই জায়গাগুলাও অন্য সব বই ও প্রডাক্ট দিয়া রিপ্লেইসড হইতে থাকবে।
অই ক্রিয়েটিভ ও ইন্টেলেকচুয়াল জায়গাতে রিচ করতে হইলে বাংলা-ভাষারে দেখার কালচারাল পজিশনটারে রিভিউ করা লাগবে। কলোনিয়াল বাংলা-ভাষারে ‘শুদ্দ’ বইলা ভাবার এবং ‘মহান’ ও ‘পবিত্র’ করার পোজেক্টগুলারে থামাইতে হবে।
চাইলে কি বাংলাদেশের একজন মানুশ ফ্রেঞ্চদের মতো ফরাসি কইতে পারবে? বা একজন স্প্যানিশ কি পারবে ঠিকঠাক মতো বাংলা কইতে? আপনি যদি ব্রিটিশ-স্ট্যান্ডার্ড দিয়া আম্রিকান ইংলিশরে মাপতে থাকেন তাইলে তো আম্রিকান-ইংলিশরে “অপ্রমিত”, এমনকি “আঞ্চলিক” ভাষা-ই মনে হইতে থাকবে! আর এইটা খালি ‘ভুল’ না, বরং পলিটিকাল প্রজেক্ট হিসাবে রিকগনাইজ না করতে পারার (বা আসলে চাওয়ার) সমস্যাও।
তো, এই ভাষার পজিশনটা খুবই গোড়ার একটা জায়গা। এই জায়গাটারে রিভিউ করতে, রি-কন্সিডার করতে রাজি না হইলে বাকি সবকিছুই আলগা আলগা ঘটনা হয়াই থাকার কথা।
…
হাউএভার, বাংলাদেশে বইয়ের আলাপ এইটুক না। এমনকি এইগুলা কোন টুটকাও না যা দিয়া বইয়ের মার্কেটের সমস্যাগুলার সমাধান করা যাবে। বরং এইটা একটা আলাপের শুরু যেইখানে বুক-বিজনেস লগে যারা ইনভলব আছেন: রাইটার – এডিটর – পাবলিশার – প্রেসমালিক – টেকনিশিয়ান – ডিস্ট্রিবিউটর – বুকশপগুলা তাদের ইন্ট্রিগ্রেশনের প্রসেসটা নিয়া চিন্তা-ভাবনা শুরু করতে পারেন।
Leave a Reply